আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক আওয়ামী লীগ সাংসদ গোলাম মাওলা রনি অবাক করে দেওয়ার মতো নতুন কিছু মুখ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চলে আসবে
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
দলের যারা খুব ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী তারা হয়তো মনে করছেন, দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত কমিটিতে হাইব্রিডদের একজনও আসবেন না। কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে হাইব্রিডদের অনেকেই ভালো ভালো পদে চলে আসবেন। হাইব্রিড নেতারাও ভাবছেন, ত্যাগী নেতাদের কাউকেই কমিটিতে আনা যাবে না! কিন্তু ত্যাগী নেতারাও কমিটিতে চলে আসবেন। আবার এই দুই গ্রুপের বাইরে আমাদের মতো যারা রয়েছেন, যাদের দল থেকে অনেকেই হিসাবে আনছেন না তাদের মধ্যে থেকেও হয়তো আমি কিংবা আমি নই অন্য কেউ চলে আসতে পারেনÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি।
তিনি বলেন, হাইব্রিড নেতারা অনেক কথাবার্তা বলেন। দেখা গেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা তিনি বললেন, কিন্তু তার সে কথা কিন্তু কেউ শুনবেই না। আমাকে দিয়ে যখন দল একটা কথা বলাবে তখন এককোটি অর্ডিয়্যান্স পাবে। কিন্তু একজন হাইব্রিড নেতাকে দিয়ে যখন কথা বলাবে তখন একলাখ মানুষও তার সেই কথা শুনবে না। তারা দেখবে, কিন্তু শুনবে না। হিসাবে আনবেন না।
তিনি আরও বলেন, হাইব্রিড নেতারা এখন অনেক পাওয়ারফুল। তাদের সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া যাবে এমনটি আমি মনে করি না। বরং তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চলে আসবেন। তাদেরকে কেউ বাদও দিতে পারবে না! একই সঙ্গে যারা দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা রয়েছেন তারাও কমিটিতে চলে আসবেন। অবাক করে দেওয়ার মতো নতুন কিছু মুখও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চলে আসবেন। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে চমক সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মাওলা রনি বলেন, এই কাউন্সিল ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশা-আকাক্সক্ষা অপরিসীম। কারণ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা আটবছরের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে দলটি। ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলের জন্য বিরাট একটি শুভ সময়। তার ফলে যেকোনো সময়ের চেয়ে এই সম্মেলনটি ঝাকজমকপূর্ণ হবে। এর আগে বিএনপি জাতীয় কাউন্সিল করে ফেলেছে, যেখানে তারা অনেক বড় একটি কমিটি গঠন করে। আওয়ামী লীগকেও তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়াতে হবে বলে আমার মনে হয়। সাবেক এই সাংসদ বলেন, বিএনপির বড় কমিটি নিয়ে যে সমালোচনা হয়েছে তা ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু আলটিমেটলি আওয়ামী লীগেরও কমিটির পরিধি বাড়াতে হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছেন, এবার কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়বে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়লে বিএনপি তার সমালোচনা করবে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি ব্লেম গেইম। এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জনগণও ভালো জানে। কেন্দ্রীয় কমিটির পদ-পদবির জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ-উদ্দীপনা, উত্তেজনা, দৌড়াদৌড়ি, ছুটাছুটি একটা ভীষণ ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। এই ব্যস্ততাই রাজনীতির প্রাণ। সবাই পদ চাচ্ছেন, পদবি চাচ্ছেন, সব জায়গায় যাচ্ছেন। ধর্ণা দিচ্ছেন। একেঅপরকে বায়োডাটা দিচ্ছেন, পরিচিত হচ্ছেন। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের এ বছরের কাউন্সিলটি একটি ব্যতিক্রমী সম্মেলন হতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নিঃসন্দেহে তিনি অত্যন্ত যোগ্য একজন মানুষ। পলিসি মেকিংয়ের ক্ষেত্রে, জাতির কাছে দলকে তুলে ধরতে, বিরোধিদলের কাছে দলকে তুলে ধরতে তুলনাহীন, অসাধারণ তার ক্ষমতা। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মানুষেরাও তাকে বিশ্বাস করেন। কারণ তিনি কারও জন্যই ক্ষতিকর কেউ নন। কিন্তু সাধারণ নেতাকর্মীদের অভিযোগÑ সময়সুযোগ মতো তাকে কাছে পাওয়া যায় না। তার দরজা বন্ধ থাকে, নিয়মিত অফিসে আসেন না, বসেন না, বিদেশে থাকেন অনেকসময়। জেলায় জেলায় ঘুরে সংগঠনকে চাঙা করার বিষয়েও তার দুর্বলতা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুইভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলে। তার মধ্যে কিছু নেতাকর্মী রয়েছেন যারা সারাবছর মাঠেময়দানে, তৃণমূলে কাজ করেন। সারাদিন রাজনীতিই তাদের ধ্যান ও জ্ঞান। আওয়ামী লীগের এ ধরনের প্রচুর লোক রয়েছে। ফলে পদ-পদবির জন্য তারা সময়ই দৌড়াদৌড়ি করেন, ছুটাছুটি করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগে কিছু ‘সেনসেটিভ’ পোস্ট রয়েছে যা মাঠেময়দানে ছুটাছুটি করা নেতাকর্মীরা আগেও পাননি, আগামীতেও পাবেন না। সাধারণত সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক, সভাপতিম-লীর সদস্যÑ এসব পদ নেত্রীর উপর নির্ভর করে। নেত্রী এসব পদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা বিচারবিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের পদ পেতে অর্থ লাগে না। কিন্তু যখন আমি একটি সাংগঠনিক পদ চাইবÑ তখন আমার দৌড়াদৌড়ি, ঘুরাফেরা করতে হবে। আমার একটা খরচ হবে। আমার নির্বাচনি এলাকা থেকে লোকজন আসবে, আমার পক্ষে মিছিল দেবে, কাজ করবে, তাদের নিয়ে রীতিমতো একরকম মহড়া দিতে হবে। অথ্যাৎ দলের কাছে যদি আমাকে উপস্থাপন করতে হয়, সাংগঠনিক কাজকর্ম করতে এই মুহূর্তে আমার যে অর্থ প্রয়াজন তার পরিমাণ অনেক। আমার ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও এখন অতটা ভালো নয়, ফলে এই টাকা খরচ করা আমার জন্য অনেক কষ্টের।
সাবেক এই আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন যারা সরাসরি আওয়ামী লীগ করেন না কিংবা আগেও করতেন না। কিন্তু তাদের অনেককেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে হাইব্রিড বলা হয়। এ ধরনের কিছু লোক আওয়ামী লীগের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে এবং দলের বদনাম সৃষ্টি করছে। এই বদনাম সৃষ্টিকারী কিছু লোকের বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদে ঝড় তুলেছি, ভাষা দিয়েছি। এজন্য আওয়ামী লীগের কোটি কোটি কর্মী-সমর্থক আমার জন্য দোয়া করেন, সমর্থন করেন, ভালোবাসেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাইব্রিড জাতীয় যে সমস্ত লোকজন রয়েছেন, তাদের শুভাকাক্সক্ষী সংখ্যায় খুব কম। ওই মানুষগুলো মনে করে আমি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি। আর যারা সাধারণ কর্মী-সমর্থক, দল নিবেদিতপ্রাণ, তারা মনে করেন গোলাম মাওলা রনির মতো লোক দলে দরকার আছে। এ ধরনের লোক দলে থাকলে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। আওয়ামী লীগের কথা যারা জীবনে কখনো শুনেনি, অ্যাটলিস্ট তারা মনোযোগ দেবে।