শি জিনপিং-খালেদা জিয়া বৈঠক আগাম নির্বাচন বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহ ছিল না চীনা প্রেসিডেন্টের
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিএনপি কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলের প্রভাবশালী দেশের সহযোগিতা পাওয়ার জন্য। সহযোগিতা নিয়ে তারা আন্দোলনে যাওয়া, সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা ও দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে কাজ করছে বলে ক্ষমতাধর দেশগুলোকে পাশে চাইছে। এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাংলাদেশে বর্তমানে গণতন্ত্র নেই, তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন বলেও চীনের প্রেসিডেন্টকে জানান।
এ দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না বা ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার থেকেও বঞ্চিত বলে জানান তিনি। বিএনপি ভোটারদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে বিএনপির কথা শোনার পর চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। বলেছেন, চীন বাংলাদেশে শান্তি চায়। এ শান্তি সবাই মিলেই আনতে হবে। আরও বলেছেন, ওয়ান বেল্ট ওয়ার রোড বাস্তবায়ন করে চীন অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশকেও
পাশে চেয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সবাইকে মিলে মিশেই এগিয়ে যেতে হবে। শান্তির পথ এগিয়ে নিতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত শুক্রবার বিকালে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে এরমধ্যে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, সম্পর্ক আরও জোরালো করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও সন্ত্রাস দমনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে দুপক্ষই জোর দিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, চীনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করেছেন। তার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের বিষয়টিও স্মরণ করেছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতি সম্মান জানানোয় বিএনপিও সন্তুষ্ট।
বিএনপিনেতা বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট তার সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সবার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না তিনি। এ কারণে তার কাছে যখন বাংলাদেশে বর্তমানে গণতন্ত্র নেই, দেশের মানুষ কষ্টে আছে ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার পর তিনি জনগণকে পাশে নিয়ে সবাইকে সমস্যা সমাধান করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দল বৈঠককালে আরও বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতাসীন হলেও চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করবে এবং আরও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারেও কথা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, চীন আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। চীনের সঙ্গে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হয়নি। সব সময় উন্নতির দিকেই এগিয়েছে। এ সফরের মাধ্যমে তা আরও এক ধাপ এগিয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময়ে সরকার ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের সবকিছু আমরা জানি না। চীনের প্রেসিডেন্ট বৈঠককালে অবশ্য ম্যাডামকে বলেছেন কী কী চুক্তি হয়েছে। যেসব চুক্তি হয়েছে এসব চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার প্রতিশ্রুতি পালন করবে বলে আমরা আশা করি।
তিনি বলেন, চীন হচ্ছে এমন একটি দেশ যে দেশ ৩০০০ বছরের ইতিহাসে কখনো সাম্রাজ্যবাদ, দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি। তারা কখনো উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা কিংবা কলোনি স্থাপন করেনি। আগামী দিনে করবে বলেও মনে হয় না। কারণ তারা শান্তি প্রিয় দেশ ও জাতি। তাদের দেশের জনগণই হচ্ছে ক্ষমতার মূল উৎস। বাংলাদেশেও জনগণ মূল উৎস হবে বলে মনে করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে চীন সফরের জন্য কোনো আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেবিলের আলোচনার সময় এমন কথা শুনিনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন কিনা সেটা আমি ঠিক বলতে পারব না।
বিএনপির সূত্র জানায়, চীনের সঙ্গে বর্তমান সরকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার জন্য যা যা করা দরকার সবই করা হচ্ছে। সে হিসেবে চীনও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে।
যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে সেগুলো বিএনপি কিভাবে দেখছে? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক যেগুলো স্বাক্ষর করা হয়েছে সেগুলো আসলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ভালো। তবে এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ চুক্তির টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশনগুলো আমরা জানি না। তাছাড়া ঋণ কত সুদে নেওয়া হচ্ছে সেগুলো জনগণকে জানানোর প্রয়োজন আছে। আমরা চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও জোরালো হোক সেটাই চাই। তবে সে জন্য চীনের স্বার্থ ছাড়াও আমাদের স্বার্থটাও যাতে রক্ষা হয় সেটাও দেখতে হবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কিনা কিংবা সহায়তার কথা বলেছেন কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অটুট থাকবে। চীন অভ্যন্তরীণ ব্যাপারের চেয়ে বাণিজ্য বিষয়ে বেশি আগ্রহী। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে তেমন কোনো অবস্থানের কথা জানাননি। কী চান সেটা বলেছেন।
সূত্র জানায়, ৪০ মিনিটের বৈঠকে খালেদা জিয়া চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশ ‘গণতন্ত্রহীন’ অবস্থায় রয়েছে বলে জানান। শি জিনপিং এ ব্যাপারে মন্তব্য করেননি। বলেছেন, তার দেশ শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ও বাংলাদেশ দেখতে চায়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চীনের মাননীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সব সময় আশা করে, চীন তাদের উন্নয়ন কর্মকা-ে সব সময় সহযোগিতা করবে ও পাশে থাকবে। চীনও আশা করে, উন্নয়ন কর্মকা- এবং ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে চীন যে ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে উন্নয়ন ক্ষেত্রে, তাতে বাংলাদেশ জোরালো সমর্থন জোগাবে। সম্পাদনা: মাহমুদুল আলম