কোনো তথ্যই উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ বায়োমেট্রিকের পরও একই নম্বর থেকে একর পর এক হুমকি
বিপ্লব বিশ্বাস: বায়োমেট্রিক (আঙ্গুলের ছাপ) পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের পরও ফোনে হুমকির ঘটনা বন্ধ হয়নি। তবে পুলিশ বলেছে, বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে। হয়তো খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। কোনো অগ্রগতি থাকলে আপনাদের জানানো হবে।’ সিমটি নিবন্ধিত কিনা? নিবন্ধিত হলে ২৪ ঘণ্টা পরও কেন হুমকিদাতাকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও তদন্ত করছি। কোনো ধরনের অগ্রগতি থাকলে তা জানানো হবে।’
সর্বশেষ গতকাল হুমকি দেওয়া হয়েছে কথাসাহিত্যিক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমিন হককে। এর আগে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। একের পর এক এ ধরনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মোবাইল ফোনে যে নম্বর থেকে হত্যার হুমকি দিয়ে ক্ষুদেবার্তা (এসএমএস) এসেছিল সে নম্বরের মালিককে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কে বা কারা এই ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না পুলিশ। এরপর ওই একই নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয় লেখক মঈনুল আহসান সাবেরকেও। দুটি ঘটনার কোনো তথ্যই পুলিশ এখনও উদঘাটন করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘যারা এ ধরনের হুমকি পেয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। তিনি আরও বলেন, যে মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি এসেছে তা বায়োমেট্রিক ডাটাবেজে রক্ষিত ডাটাবেজের সঙ্গে মিলিয়ে বের করা সম্ভব কে বা কারা এই কাজ করেছে।’কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন সক্রিয় সব মোবাইল ফোনের বায়োমেট্রিক তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষিত আছে। তারানা হালিম আরও জানান, সম্প্রতি মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় নিহত জঙ্গিদের পরিচয় জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ (এনআইডি) থেকে উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। ডাটাবেজে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষিত থাকায় এই অগ্রগতি। এছাড়া বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন থাকায় সম্প্রতি এ ধরনের কিছু জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।
বিআরটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্প্রতি জালিয়াত চক্র অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে (মোবাইলের মাধ্যমে) মানুষকে হয়রানি করছে। আমাদের কাছে এরই মধ্যে কিছু অভিযোগ এসেছে। কমিশন সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।’
রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী শাহান হক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। হুমকি আসা নম্বরটির বিস্তারিত তথ্য বের করতে ডিবিতে পাঠানো হয়েছে। তারা নম্বরের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের জানাবে।’ হুমকিদাতাকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি বিস্তারিত জানেন না বলে জানান রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা। এর আগে বুধবার (১২ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে আনু মুহাম্মদের মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি বৃহস্পতিবার রাতে জিডি করার সময়ও একই মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি পেয়েছেন তিনি।
রামপুরা থানার এসআই এমদাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এটা নিয়েই কাজ করছি। প্রচুর চাপে আছি। এখনও নম্বরটির প্রকৃত মালিক কে বা কোথায় থেকে পাঠানো হয়েছে তা জানা যায়নি।’ সম্পাদনা : সুমন ইসলাম