ঢামেকে অ্যাম্বুলেন্স চাপায় নিহত ৪ মা-ছেলের পর প্রাণ গেল মা ও অনাগত সন্তানের
মাসুদ আলম ও মোস্তাফিজুর রহমান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ বক্সের সামনে অ্যাম্বুলেন্স চাপায় গর্ভের সন্তান মারা যাওয়ার পর এবার চলে গেলেন মা আমেনা বেগম সূর্যিও (৩০)। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সূর্যির দুই শিশু সন্তান সজীব (৮) ও বাচ্চু মিয়া এবং রিকশাচালক রমজান আলী (৩০) আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এর আগে শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঘটা এ দুর্ঘটনায় মা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- গোলিনুর বেগম (২৫) ও তার ছেলে সাকিব (৭)। নিহত আরেক ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। এ ঘটনায় পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সচালক সোহেলকে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে খালি অ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুত গতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ঢুকে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে একটি রিকশা ও কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যায় সাকিব নামে এক শিশু ও অজ্ঞাত (৬০) এক বৃদ্ধ। এতে আহত সাকিবের মা গোলিনুর বেগম (২৫) ও ছয় মাসের অন্ত:সত্ত্বা আমেনা বেগম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙাবালির বাইজদা থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসেন গোলিনুর বেগম, তার স্বামী ফেরদৌস মিয়া ও তাদের দুই সন্তান। পরে শনিবার সকালে রিকশায় করে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে এসে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তবে অক্ষত রয়েছে ফেরদৌস ও ছেলে আকাশ। সূর্যি বেগমের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরে। তার স্বামীর জাকির হোসেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সকালে নাস্তা নিয়ে আসার সময় অ্যাম্বুলেন্সের নিচে পড়েন সূর্যি। তার ছেলে সজিবের বাম পা ভেঙে গেছে। নিহত অজ্ঞাত ব্যক্তি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ভিক্ষা করতো বলে জানা গেছে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ ঢামেকে রয়েছে। নিহত সাকিবের বাবা ফেরদৌস মিয়া জানান, শুক্রবার সপরিবারে ঢাকায় আসার পর সূত্রাপুরে শ্যালক ফারুকের বাসায় উঠেছিলেন ফেরদৌস। সকালে সবাই আসেন ঢাকা মেডিকেলে । ফেরদৌসের সঙ্গে তার অন্য ছেলে সাত বছরের আকাশও ছিল। কিছুদিন আগে তার ছেলে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। জরুরি বিভাগে ঢোকার আগে দ্রুতগামী অ্যাম্বুলেন্সটি তার স্ত্রী ও ছেলেকে চাপা দেয়। এতে সাকিব ও তার মা গোলিনুর বেগমের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের মালিক নাসির মিস্ত্রী নামে একজন। তবে তিনি গাড়িতে ছিলেন না। ওই সময় নাসিরের সহকারী সোহেল গাড়ি চালাচ্ছিল। সোহেলকে আটক করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সটিও জব্দ করা হয়। নিহতের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়াল্টি বিভাগের ডা. মো. আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, সূর্যির পেটের ছয় মাসের সন্তনটি এ দুর্ঘটনার কারণে মারা গেছে। তার স্বামী জাকির হোসেন একজন ট্রাকচালক। গত ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দুদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি। সকালে জাকিরের জন্য নাস্তা নিয়ে আসার সময় অ্যাম্বুলেন্সের নিচে পড়েন। তার ছেলে সজিবের বাম পা ভেঙে গেছে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি