বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতিতে মতৈক্য নিয়ে বিদায় নিলেন শি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করা, ২০১৭ সালকে দুই দেশের সম্পর্ক বন্ধুত্ব আদান প্রদানের বছর ঘোষণাসহ গুরুত্বপূর্ণ ২৭ চুক্তি স্বাক্ষর শেষে উষ্ণ ও সর্বোচ্চ মর্যাদায় বরণ ও বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দুদিনের ঢাকা সফর।
গত শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে বরণ করলেন শিকে। আর গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শি-কে বিদায় জানান। বিদায় বেলায় শি শেখ হাসিনার করমর্দনের মধ্য দিয়ে আবারো ২০১৭ সালকে বন্ধুত্বের বছরের ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দিলেন।
এর আগেও অনেক রাষ্ট্রীয় অতিথি এসেছেন বাংলাদেশ সফরে। প্রাণঢালা শুভেচ্ছাও পেয়েছেন। নানা দিক থেকে বাংলাদেশে সেসব নেতার সফর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে ইতিহাসে। কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্টের এই ঢাকা সফর বোধ হয় ‘রাজনৈতিক কূটনীতির’ পাশাপাশি চীনের শক্তিশালী অর্থনৈতিক কূটনৈতিক বার্তা দিয়ে অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর আগে অন্য কোনো নেতার সফরের সময় এত বিপুল বিনিয়োগের ঘনঘটা ঘটেনি। এর আগে গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে ২০০ কোটি ডলারের এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনোজা আবের সফরকে কেন্দ্র করে ৬০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর এবার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির শক্তির নেতা জিনপিং ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোডের’ সম্প্রসারণের ভিত্তিতে সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনার যে ঘোষণা দিলেন তাতে প্রায় ২৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি পেল ঢাকা।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলের তোড়া দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি দল চীনা প্রেসিডেন্টকে সামরিক কায়দায় বিদায়ী অভিবাদন জানায়। এরপর লাল গালিচার উপর দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টকে উড়োজাহাজ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বিদায় জানান শেখ হাসিনা।
এর আগে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চীনের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ওড়ার আগে বিমানবাহিনীর চারটি বিমান বিমানবন্দর থেকে ওড়ে। এগুলো বাংলাদেশের আকাশসীমা পর্যন্ত চীনা প্রেসিডেন্টকে পাহারা দেয়। বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে সফরের শেষ কর্মসূচিতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শি। স্মৃতিসৌধে চীনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। শি শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়ার পর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ এবং পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
উল্লেখ্য, জিনপিং ২০১০-এ প্রথমবার ঢাকা সফরে এসেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর আগে চীনের নেতাদের মধ্যে প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েননিয়েন ১৯৭৮ সালে একবার ঢাকা সফরে এসেছিলেন। এর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৬ সালে আর একবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তিনি। এটাই ছিল সর্বশেষ কোনো চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের বাংলাদেশ সফর।
অবশ্য স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তান আমলে একবার ঢাকা সফরে এসেছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট লিউ শাওচি। যার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ভিত্তিও তৈরি হয়। চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্টের সফরকে ঘিরে সেই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ভিত্তিকেই আরও এগিয়ে নেওয়ার আশা দেখেছিল বাংলাদেশের রাজনীতি ও ব্যবসায়ী মহল। তার প্রভাব কতদূর পড়বে, তা ভবিষ্যতই বলবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম