পাকিস্তানবিরোধী সমবেত বার্তা না-ও আসতে পারে ব্রিকস ঘোষণা থেকে
বিশ্বজিৎ দত্ত : ব্রিকস সম্মেলনের আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম আলোচনায় বসেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে। সেখানেই ১৮টি সামরিক চুক্তি করেছেন। আর এ চুক্তির মধ্যে রাশিয়ার সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০০ কেনার চুক্তি। চুক্তিগুলোর একটি অন্যতম উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিকস সম্মেলন থেকে সমবেতভাবে ঘোষণা দেওয়া। গতকাল নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু চীন। কাশ্মীরে ভারতীয় অংশে উরি হামলার পরও চীন পাকিস্তানকেই সাপোর্ট করেছে। কাশ্মীরের নিষিদ্ধ সংগঠন জইশ-ই মুহম্মদের নেতা মাসুদ আজাহারের ব্যাপারেও চীন জাতিসংঘে ভারতীয় প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। ভারত মাসুদ আজাহারকে সন্ত্রাসী নেতা হিসেবে জাতিসংঘের তালিকাভুক্তির দাবি করেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় এ আলোচনায় কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে পাকিস্তানকে একটি সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিকস সম্মেলন থেকে একটি সমবেত ঘোষণা দেওয়ার। মোদি অবশ্যই চাইবেন ব্রিকসের মঞ্চ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী, আরও স্পষ্ট করে বললে, পাকিস্তানবিরোধী একটা সমবেত বার্তার প্রচার। চীনের অবস্থান থেকে সে উদ্যোগে সামিল হওয়া অসম্ভব। ভারতকে তাই মহাসম্মেলনে উপস্থিত দেশনেতাদের আলাদা আলাদা বিবৃতি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। যৌথ বিবৃতির কোনো সম্ভাবনাই নেই। কূটনীতিকরা মনে করছেন, ব্রিকস থেকে এ ধরনের ঘোষণা না-ও আসতে পারে।
উল্লেখ্য, ব্রিকসভুক্ত পাঁচটি দেশই এ মুহূর্তে সমস্যাজর্জরিত এবং সেই সমস্যা প্রধানত অর্থনৈতিক। ৫ দেশের মধ্যে বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের আর্থিক বৃদ্ধি হার এখনো ৭ শতাংশ হলেও তা গত ২৫ বছরের মধ্যে চীনের সবচেয়ে কম বৃদ্ধি এবং এই শ্লথতাই এখন চীনের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা। পেট্রোলিয়ামের দাম অনেকটা কমে যাওয়ার ধাক্কায় রাশিয়ার অর্থনীতিও সংকটপ্রবণ। ১৯৩০ সালের পর ব্রাজিল এমন তীব্র মন্দা দেখেনি এবং রিও অলিম্পিক ব্রাজিলের সংকটের সামান্যতম সুরাহাও করতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি এতটাই টালমাটাল যে, বছর শেষের আগেই সেদেশের ক্রেডিট রেটিং নেমে ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছবে। ভারতীয় অর্থনীতির ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি হার নিয়ে যতই মাতামাতি হোক, প্রতি বছর কাজে যোগ দিতে ভারতে নতুন যে ১০ লাখ মানুষ প্রস্তুত থাকেন, তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এখনো দূরঅস্ত। শ্লথ হয়ে আসা অর্থনীতি আবার চাঙ্গা করতে খুব সুবিধা হবে চীনের যদি ৫ ব্রিকস-দেশের মধ্যে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট না-হোক, আন্তঃবাণিজ্য শুল্ক হার নিয়েও কোনো সমঝোতায় আসা যায়। কিন্তু চীনের উৎপাদনের সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতায় শুধু ভারতই নয়, অন্যান্য দেশও কোণঠাসা। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী