ব্রিকস-বিমসটেকে যোগ দিতে আজ ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা-মোদি বৈঠকে তিস্তা নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আভাস
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে যোগ দিতে আজ রোববার ভারতের গোয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। এছাড়াও বৈঠক করবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনসহ অন্যসব দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে।
দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, হাসিনা-মোদি বৈঠকে তিস্তার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তার বিষয়ে নারাজ হলেও মোদি নিজ দায়িত্বেই তিস্তার বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।
সূত্রমতে, মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, সন্ত্রাসদমন, পাকিস্তানকে একঘরে করা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাদের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পেতে চায় ভারত। ইতোমধ্যে দুই দেশের কূটনীতিকরা স্বার্থসংশ্লিষ্ট এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে মোদির ভাবনাকে যদি শেখ হাসিনা শতকরা একশ ভাগ সমর্থন করেন তবে ভারত সরকারেরও উচিত তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করা।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতার আপত্তি সম্পর্কে জানে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ চাইছে তিস্তা নিয়ে মোদিই সিদ্ধান্ত নিক। মমতা তিস্তা নিয়ে অবস্থান বদলাননি। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে কিছু ত্যাগ স্বীকার করেও তিস্তা চুক্তি করতে আগ্রহী মোদি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। তার আগেই নরেন্দ্র মোদি তিস্তা নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি করতে উদ্যোগী।
ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, মমতাকে রাজি করানোটা ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’Ñ এই যুক্তিতে দায়িত্ব মোদির উপরই ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা। শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৬ অক্টোবরের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি তিস্তার ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তাই দিতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা অভিযোগগুলো দ্রুত মেটাতে চান মোদি।
হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মমতার সঙ্গে তিস্তা নিয়ে আলোচনা করবেন। পররাষ্ট্র সচিব ও অন্য কূটনীতিকদের পাশাপাশি মমতার সঙ্গে মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিস্তার প্লাবনে যাতে দার্জিলিংয়ে ধস না নামে, সে জন্য নদীর ধারে পাড় ভেঙে দেওয়া এবং ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন বা এনএইচপিসির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিম দুই রাজ্যেরই বৈঠক করানোÑ এসবই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে।
বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের যুদ্ধাবস্থা এবং পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় এবারের সার্ক বাতিল হওয়ার ঘটনা এবং ভারতের সঙ্গে শিথিল সম্পর্কের দেশ চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পর হাসিনা-মোদির এ সাক্ষাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্রগুলো বলছে, ভূ-রাজনীতির নতুন মেরুকরণে বাংলাদেশ এশিয়ার প্রভাবশালী দুই দেশÑ চীন ও ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সব সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ। ফলে ভারত মনেই করে বাংলাদেশ যে কোনো পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে থাকবে। কিন্তু সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্টের সফর এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঘোষণা ভারতকে কিছুটা চিন্তায় ফেলেছে।
সূত্র বলছে, এশিয়ার প্রভাবশালী অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অমীমাংসিত ইস্যুগুলোয় আলোচনার ক্ষেত্র বাড়বে বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রোববার সকাল ৮টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়বেন। গোয়ায় ১৫ ও ১৬ অক্টোবর অষ্টম ব্রিকস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সম্মেলনের ব্রিকস সদস্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মিশেল টেমের, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মেদি অংশ নেবেন।
বিসমটেকভুক্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আউটরিচ সামিটে অংশ নিচ্ছেন।
গোয়ায় পৌঁছে শেখ হাসিনা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন। দুপুরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের সম্মানে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রোববার রাতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সোমবার সকালে দেশে ফিরবেন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম