যৌথ বিনিয়োগ ১৩.৬ বিলিয়ন ডলার চীনের ১৬ কোম্পানি বিনিয়োগ করবে ১৮৬ বিলিয়ন ডলার
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: চীনের কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে। এরই অংশ হিসাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের সময়ে এই ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। চীনের ১৬টি কোম্পানি বাংলাদেশে ১৮৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। তারা বেশিরভাগই
বিনিয়োগ করবে জুট গুডস, ফিশ সেক্টরে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন সেক্টর রয়েছে। এই জন্য চুক্তি করা হয়েছে। গত বছর ধরেই এই ব্যাপারে চেষ্টা চলছিলো। সেই চেষ্টার সফল হয় এবারের প্রেসিডেন্টের সফরে।
এছাড়াও চীনের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ১৬টি কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। ওই সব কোম্পানির সঙ্গে মোট ১৯টি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এতে করে মোট বিনিয়োগ করবে ১৩.৬ বিলিয়ন ডলার।
এই ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, চীন তাদের বড় বিনিয়োগের জায়গা মনে করছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে তাদের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগে উৎসাহী। এই কারণে তারা এখানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সেই হিসাবে এবারের চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময়ে এই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আবার চুক্তিগুলোও স্বাক্ষর করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে কোম্পানিগুলোর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এরমধ্যে বেক্সিমকো, মেঘনা এবং এস আলম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ বেক্সিমকোরই চুক্তি হয়েছে বেশ কয়েকটি। ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। কক্সবাজারের একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের ব্যাপারেও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, এখন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে এই সব চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, এবার চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময়ে যে চুক্তিগুলো হয়েছে এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের একটি সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা আশাবাদী। দুই দেশের কোম্পানিগুলোর যৌথ উদ্যোগে যে বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে তাতে বাণিজ্য বৃদ্ধি বাড়বে। প্রথমদিনে যে চুক্তি হয়েছে সেগুলো সিসিপিআইটির মাধ্যমে হয়েছে। সিসিপিআইটি হচ্ছে আমাদের এফবিসিসিআইয়ের মতোই একটি অ্যাসোসিয়েশন। তবে চীনের আগ্রহ বেশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তারা সিল্করোড, ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাইছে। এছাড়াও ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমেও ঋণ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে চীনের এখন এত রিজার্ভ আছে সেগুলোও বিনিয়োগ করা দরকার। তাই তারা নতুন নতুন বাজার খুঁজছে। আর যেসব দেশে বিনিয়োগ আছে সেই সব বিনিয়োগ বাড়াতে চাইছে।
তিনি বলেন, চুক্তি অনেক সময়ই হয়। তবে এই সব চুক্তির সবগুলো সব সময় বাস্তবায়িত হয় না। কারণ চুক্তিগুলো হলো বিনিয়োগের প্রথম ধাপ। এর ভিত্তিতেই কাজ শুরু করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় সব চুক্তি বাস্তবায়িত না হলেও আবার অনেক সময় দেখা যায় অনেক কোম্পানি কাজ করছে যেগুলো চুক্তি ছাড়াই হয়। কারণ ওই সব কোম্পানি সব চূড়ান্ত করার পর কাজ শুরু করে। ওই সময়ে চুক্তি করে। আর এবার যেটা হয়েছে তা হলো এসব চুক্তি স্বাক্ষর করার পর এখন সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে এরপর কাজ করা হবে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী হিসাবে আমরা এই সব চুক্তি স্বাক্ষরকে সরকারের শুভ উদ্যোগ বলে মনে করছি। এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, চীনের কোম্পানির সঙ্গে দেশের কোম্পানিগুলোর ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারের যে বিনিয়োগ করার জন্য চুক্তি করা হয়েছে এটা বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। কারণ এই সব চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে পারলে দেশি কোম্পানিগুলো লাভবান হতে পারবে। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য এখন পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করতে হবে। আমি মনে করি চুক্তি করাটাই বড় বিষয় নয়। চুক্তির বাস্তবায়নই বড় বিষয়। আর তাদের কোম্পানিগুলো যে ১৮৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।