আজাদ হোসেন সুমন: বহু অঘটনের নায়ক ও জঙ্গি মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার কয়েক মিনিট আগেও সহযোগী জঙ্গিকে উদ্দেশ্য করে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে ‘আপনারা কাজ চালিয়ে যান’ বলে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এছাড়া গত ২ বছরে গুলশান হামলার ঘটনাসহ অর্ধশত ঘটনা টুইটারে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসকে জানিয়েছে। তামিমের কাছ থেকে উদ্ধার করা ল্যাপটপ থেকেই এসব তথ্য উদ্ধার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সম্প্রতি এসব তথ্য জানতে পেরেছে।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম চৌধুরীর অবস্থান জানতে পেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াত টিম যখন ওই বাসাটি ঘিরে ফেলে তখন তামিম চৌধুরী বুঝতে পারেন যে, আর রক্ষা নেই। এরপরই বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে অপর জঙ্গিকে তামিম জানায়, ‘চারটি মাইক্রো। মেইন রাস্তার উপর থেকে ওরা পজিশন নিচ্ছে। মনে হচ্ছে ওরা শতভাগ কনফার্ম হয়ে আসছে। আমরা ইনফো (তথ্য) আস্তে আস্তে ডেস্ট্রয় করা শুরু করেছি। আপনারা কাজ চালিয়ে যাবেন।’ এরপরই তামিম ল্যাপটপ ভাঙার চেষ্টা করেন। ল্যাপটপ পুরোপুরি ভাঙতে সক্ষম না হলেও তামিম বেশকিছু জঙ্গি নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলে। পুলিশ ল্যাপটপটি উদ্ধার করে। কিন্তু ল্যাপটপের ভাঙা অংশ থেকেই আইটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে তথ্যগুলো উদ্ধার করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে গোয়েন্দারা আরও জানতে পারেন যে, তামিম ঢাকায় বসে আইএসের কাছে টুইটারে বার্তা পাঠাতো। এমনকি গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহামলার টুইট বার্তা ও নিহতদের ছবিও আইএসের কাছে পাঠায় সে। এছাড়াও জঙ্গি নেটওয়ার্কসহ নানা তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গুলশান হামলার আগে আইএসের (ইসলামিক স্টেট) পক্ষ থেকে প্রায় ৫০টি হামলার দায় স্বীকার করা হয়। দায় স্বীকারের প্রতিটি বার্তা তামিম চৌধুরী টুইটারে লিখে পাঠাতো। আইএসের প্রতিনিধির কাছে পাঠানোর পর সেসব বার্তা প্রকাশ করা হতো আইএসের কথিত আমাক এজেন্সির মাধ্যমে। তামিমের ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করা বার্তাগুলোর সঙ্গে আমাক এজেন্সির দায় স্বীকার করা বার্তাগুলোর মিল আছে। ঢাকায় বসেই তামিম টুইটারে এসব বার্তা পাঠাতো। গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহামলার টুইট বার্তার পাশাপাশি নিহতদের ছবিও আইএসের কাছে পাঠায় তামিম। গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা তা বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে তামিম ও মারজানের কাছে পাঠায়। তামিম সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আইএসের আমাক এজেন্সির কাছে পাঠিয়ে দেয়।
পুলিশের ডিআইজি ক্রাইম হুমায়ুন কবীর বলেন, নব্য জেএমবির মিশন প্রায় খতম। যারা প্ল্যানার তারা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেউ কেউ নিহত হয়েছেন, আবার কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। কোথাও হামলা করার মতো অবস্থায় তারা এখন নেই। মারজান, রাজীবগান্ধি, বাশারুজ্জামান ও মেজর জাহিদুলের স্ত্রী ধরা পড়লেই তাদের খেল খতম। সম্পাদনা: মাহমুদুল আলম