তারেক রহমান ও মামুনের সাজার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
এস এম নূর মোহাম্মদ: অর্থপাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাজা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৮২ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশিত হয়।
তারেক রহমানের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এ প্রতিবেদককে বলেন, উনি (তারেক) এখন দেশে নেই। আর দেশে না এলে আপিল করা যাবে না। তিনি আসার পরই আমরা আপিল দায়ের করব। ওয়েব সাইটে দেখা যায়, মূল রায়টি লেখেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। আর
তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি আমির হোসেন। রায়ে বলা হয়, বিদেশে পাচার করা ২০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করার আদেশ বাতিল করা হলো। কারণ সংশ্লিষ্ট আইনে বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত জরিমানার অর্থ আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত থাকবে। এছাড়া এ অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জাম হোসেন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলাম, মায়ের সায়েরি ও মেরিনা জামানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাজনৈতিক ঢাল ব্যবহার করে অবৈধভাবে এভাবে সম্পদ অর্জনের প্রবণতা বাড়ছে। আমরা জোরালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যে, দুর্নীতির চর্চা ও রাজনৈতিক প্রভাব তর্কাতীতভাবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অর্থপাচারের মতো অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে, যা গোটা সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে বলা হয়, রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অবৈধভাবে অর্থ অর্জনে অনৈতিক আনুকূল্য নেওয়ার প্রবণতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের নিন্দা করার জন্য এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বড় ধরনের সুসংগঠিত অর্থনৈতিক অপরাধ যেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য সমাজকে সজাগ হতে হবে। নিম্ন আদালতের বিচারক সম্পর্কে বলা হয়, যে যুক্তি দেখিয়ে আদালত তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন তা অনুমান নির্ভর। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিচারক নিজেই তারেক রহমানের পক্ষ অবলম্বন করেছেন। তারেক রহমান দোষী হওয়ার পরও তাকে খালাস দিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন।
এর আগে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের আপিল মঞ্জুর এবং সাজার বিরুদ্ধে মামুনের আপিল খারিজ করে চলতি বছরের ২১ জুলাই এ রায় ঘোষণা করেন একই বেঞ্চ। রায়ে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদ- ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে রায় দেয় হাইকোর্টের এ বেঞ্চ। যদিও এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছিল। একই মামলায় তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদ- বহাল রাখে হাইকোর্ট। তবে নিম্ন আদালতে তাকে দেওয়া ৪০ কোটি টাকার জরিমানা পরিবর্তন করে ২০ কোটি টাকা করে আদালত।
২০০৯ সালে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন এ মামলা করে। টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দিতে নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নিয়ে তা সিঙ্গাপুরে পাচারের অভিযোগ আনা হয় মামলাটিতে। এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। পরে তারেক রহমান মামুনের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ওই টাকা থেকে তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে খরচ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন মামলার রায় ঘোষণা করেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি আপিল দায়ের করা হয় হাইকোর্টে। সম্পাদনা: রিকু আমির