হাসিনা-মোদি বৈঠক তিস্তার সমাধানে মমতার আপত্তিগুলো মিটিয়ে ফেলার কাজ চলছে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: তিস্তার জট খুলবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরেও তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন এবং উন্নয়নের পথে একসঙ্গে হাঁটার অঙ্গীকার করেছে।
গোয়ায় রোববার রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয়
বৈঠকে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এ অঙ্গীকার করেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। নয়দিল্লি সূত্রের দাবি, বৈঠকের শুরুতেই তিস্তার পানিচুক্তি নিয়ে তাগাদা দিয়েছেন হাসিনা। তিনি বলেছেন, ২০১৮-য় বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবে তার আগে, অর্থাৎ আগামী বছরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এ চুক্তিটি সম্পাদন করতে চায় ঢাকা। শেখ হাসিনা তিস্তা বিষয়ে মোদিকে বলেন, তিস্তা শুধু পানিচুক্তি নয়, বাংলাদেশের জনগণের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। এব্যাপারে হাসিনার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও জানানো হয় মোদিকে। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতকে লাগাতার সহযোগিতা করে আসছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাটিতে থাকা ভারতবিরোধী জঙ্গি ঘাঁটিগুলো নির্মূল করা হয়েছে। প্রতিদানে তিস্তাচুক্তি চান বাংলাদেশের মানুষ।
জবাবে মোদি বলেছেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষগুলোর ঐকমত্য তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে গত বছর বাংলাদেশে গিয়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পাদন করেছি। তখন সেখানে মমতা বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের পাশে রয়েছেন। তিস্তার ক্ষেত্রেও মমতার আপত্তিগুলো আলোচনায় মিটিয়ে ফেলে যাতে দ্রুত চুক্তিটি নিয়ে বাস্তবায়নের পথে হাঁটা যায়, সে ব্যাপারে জোর চেষ্টা চলছে। হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছেন মোদি।
জানা গেছে, বৈঠকে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন জঙ্গি-সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারতের পাশে থাকবে বাংলাদেশ। নিরাপত্তা নিয়ে সহযোগিতা ও সন্ত্রাস দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের হাসিনাকে সাধুবাদ জানান তিনি। গত শনিবার ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলেন যোগ দিতে শেখ হাসিনা ২০ ঘণ্টার সফরে গোয়ায় যান। রোববার বিমসটেকের সম্মেলনের রিট্রিটের বক্তব্যেও শেখ হাসিনা আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ব্রিকস-বিমসটেক জোটকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন। জোটে অংশ নেওয়া অন্য কোনো দেশ এ ব্যাপারে সরব ছিলেন না। আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন শেষ হওয়ার পরই হাসিনা-মোদির একঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক চলে। বৈঠকে মোদি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কেও জানতে চান। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, দ্বিপক্ষীয় সকল বিষয় আলোচনায় এসেছে এবং আমরা ভারতের সঙ্গে সব সমস্যা সমাধানে আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বছরের শেষে নয়াদিল্লি সফরের সম্ভাবনা রয়েছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস মোকাবিলা কার্যকরভাবে কিভাবে করা যেতে পারে তা নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সন্ত্রাস মোকাবিলায় তার সরকারের গৃহিত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়ে বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় নেতাসহ সর্বস্তরের জনগণকে এ উদ্যোগে শরীক করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সামাজিক প্রভাবসমূহ ব্যাপকভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি ক্ষতিকর এসব প্রভাবের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের বিষয়েও একমত হয়েছেন। সার্কের বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও মোদি একমত যে, এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সার্ক সম্মেলন হওয়ার কোনো অর্থ নেইÑ এ বিষয়ে যে দুই দেশই অভিন্ন মত পোষণ করে, সে ব্যাপারেও দুই প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে সার্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি বলে জানান তিনি। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে সচিব বলেন, তিস্তা নিয়েও কথা হয়েছে। তবে কী আলোচনা হয়েছে তা তিনি বলেননি। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুই জনই একমত হয়েছেন যে, প্রটোকলের বাইরেও দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে আরও বৈঠক হওয়া উচিৎ।’
বৈঠকে উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গিহামলার কড়া নিন্দা করেছেন হাসিনা। সার্ক বয়কটের ডাকও দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই সীমান্ত-পারের সন্ত্রাস নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন