ভারতীয় পত্রিকার প্রতিবেদন চীন-পাকিস্তানের ‘সহায়তায়’ উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যাপক হামলার পরিকল্পনা উলফার
মাছুম বিল্লাহ: চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনতির সুযোগে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা-আই) কমান্ডার ইন চিফ পরেশ বড়–য়ার নেতৃত্বে উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যাপক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পশ্চিম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো। এ সংগঠনগুলোর জোটের নাম ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব উইসা (ইউএনএলএফডব্লিউ)।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবির একটি প্রতিবেদনের বরাতে আসামের প্রভাবশালী অসমীয়া দৈনিক ‘অসমীয় প্রতিদিন’ এ খবর দিয়েছে। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করা ভারতের চীনের সঙ্গেও শুরু হয়েছে সংঘাতময় পরিস্থিতি। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা অস্থির করা তথা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণ করার সমর কৌশল তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে উলফা ও কয়েকটি উগ্রপন্থী সংগঠন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো গোয়েন্দা সংস্থা আইবির এক গোপন প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে এই তথ্য।
অসমীয় প্রতিদিন জানায়, গত ১০ অক্টোবর আইবি’র অরুণাচলে অবস্থিত কার্যালয় থেকে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে উলফার সেনাধ্যক্ষ পরেশ বড়–য়ার হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে উলফা আসামের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কয়েকজন বিধায়ক, পুলিশ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীকে অপহরণের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পশ্চিম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সংযুক্ত মুক্তি বাহিনীর হয়ে উলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বড়–য়া বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে করা বার্তালাপের ভিত্তিতে উক্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী সংগঠনগুলো এ অঞ্চলের ৬টা স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়েছে। সে অনুযায়ী অরুণাঞ্চল-চীন সীমান্তবর্তী এলাকায় ন্যাশনাল স্যোসালিষ্ট অব নাগাল্যান্ড (এনএসএন) (খাপলাং) ও উলফা যৌথভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ করার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একইভাবে মনিপুর-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় পিপলস লিবারেশন আর্মি অব মনিপুরের (পিএলএএম) , উলফা এবং এনএসএন (খাপলাং), মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় জিএনএলএ, উলফা, আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড (এনডিএফবি), উলফা এবং কেএলআই সম্মিলিতভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণের নীল নকশা করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। আসাম-ভুটান সীমান্তে চিরাং জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অসমীয় প্রভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উলফা অস্ত্র এবং সামরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যাপকহারে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরেশ বড়–য়া ইতোমধ্যে তার কমান্ডারদের অর্থ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন। বিদেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন, অস্ত্র কেনার জন্য উলফা পঞ্চাশ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বলে আইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
উলফারসহ অন্যান্য উগ্রপন্থিদের এমন তৎপরতায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উলফার নেতৃত্বাধীন পশ্চিম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযুক্ত মুক্তি বাহিনীর হামলার পরিকল্পনার পেছনে কোনো বিদেশি শক্তির হাত আছে কিনা, সেজন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পর্যালোচনা করছে। কারণ, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ভারতের বেলুচিস্তান প্রসঙ্গ উত্থাপন করার প্রত্যুত্তর দিয়ে মন্তব্য করেছে যে ভারতের আসাম-নাগাল্যা-গুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কাজ করছে। এ পেক্ষাপটে ভারতবিরোধী শক্তি উত্তর-পূর্বের উগ্রপন্থী সংগঠন ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাবে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘিœত করে মূল হামলার পরিকল্পনা চালানোর ইন্ধন নাকি, সেটা ভারতের চিন্তার কারণ। সব মিলিয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য যদি সত্য প্রমাণ হয় তাহলে আগামী দিনে ভারতের উত্তর-পূর্বের জনগণ পুনরায় আতঙ্ক ও রক্তাক্ত পরিবেশের মধ্যে দিন কাটাতে হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম