জনকেরি, শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক না হওয়ার পিছনে সমন্বয়ের ব্যর্থতা জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকলেও আন্তর্জাতিক ও কূটনীতিক মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে না
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: জাতীয় পার্টি বর্তমানে সংসদে বিরোধী দলে রয়েছে। সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। কিন্তু কূটনীতিক ও আন্তজার্তিক মহলে গুরুত্ব মিলছে না। এ কারণে বিভিন্ন দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সফর করলেও বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করার ব্যাপারেও সিডিউলে প্রোগ্রাম রাখছেন না। বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করছেন না। সংসদে না থাকলেও বৈঠক হচ্ছে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে। আর এ বৈঠক না হওয়ার কারণে জাতীয় পার্র্টির নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
এর আগে মার্র্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আগস্টে বাংলাদেশ সফর করেছেন। ওই সময়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে তার আলাদা করে কিংবা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ও বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরেও রওশন এরশাদ ও বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলদা করে কোনো বৈঠক হয়নি। এ বৈঠক না হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পার্টির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, বিরোধী দলের তরফ থেকে ও বিরোধী দলের নেতার তরফ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য যে কূটনীতিক তৎপরতা দরকার এটা বিরোধী দলের নেতার ও তার স্টাফদের নেই। সম্প্রতি বৃহৎ দুটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুজন বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু আলাদা করে বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ বিরোধী দলের নেতার যারা পিএস, এপিএস ও স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা আসলে এ ধরনের বৈঠক করানোর জন্য যে ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন সে ধরনের যোগ্যতার অভাব রয়েছে। এ কারণে এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য আগে থেকে যে যোগাযোগ রক্ষা করা দরকার সেটা করতে পারছেন না। বিরোধী দলের নেতাও এ ব্যাপারে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারছেন না। যে কারণে ওইসব দেশের প্রতিনিধিরা খুব বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন না।
জাতীয় পার্টির সূত্র জানায়, জন কেরির সঙ্গে রওশন এরশাদের আলাদা করে বৈঠক করার জন্য যে যোগাযোগ রক্ষা করার দরকার ছিল তা করা হয়নি। এ কারণে আলাদা বৈঠক হয়নি। আলাদা বৈঠক না হওয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টিকে তেমনভাবে বিবেচনায় নিচ্ছে না।
জাতীয় পার্টির একজন নেতা বলেন, চীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এ দেশের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন। এ ধরনের ঘটনা আবার কবে ঘটবে সেটা বলা যায় না। আমাদের উচিত ছিল তার সঙ্গে আমাদের নেতা ও বিরোধী দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত করানো। কিন্তু হয়নি। এর কারণে আমাদের নেত্রীরও এ ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। কারণ তিনি অসুস্থ ছিলেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করা হয়নি।
জাতীয় পার্টির নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমি মনে করি জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে আছে এ গুরুত্ব দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য আমাদের তরফ থেকে এগিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। কারণ এবারই আমাদের দল প্রথম বিরোধী দলে রয়েছে। এর আগে বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি থেকেছে। এ অবস্থায় আমাদের অবস্থা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আগামী দিনে দলের গুরুত্ব আরও বাড়াতে হলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাহলে তারাই প্রয়োজন বোধ করবে বৈঠক করার। কিন্তু আমরা যদি মনে করে বসে থাকি তারাই আমাদের সঙ্গে বৈঠক করবে সেটা ঠিক না। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি মনে করি আগামী দিনে আন্তর্জাতিক মহলের গুরুত্বপূর্ণ কেউ এলে আগেভাগেই যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে যাতে বৈঠক হয়। আগেভাগে যোগাযোগও রক্ষা করতে হবে।
জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, দলের গুরুত্ব বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য দলের শীর্ষ তিনজনকেও ঐকমত্য হতে হবে। দলের তিন নেতা তিন রকম সিদ্ধান্ত নেন বলেই এমন হচ্ছে। প্রথম নেতা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই সরকারের সমালোচনা করতে চান। দ্বিতীয়জন সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিতে চান না। সরকারের সব কাজেই সম্মতি দেন। আর এক নেতা সরকার বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। এ তিন রকম অবস্থান নেওয়ার কারণে আসলে সমন্বয় হচ্ছে না। এ সমন্বয়হীনতার কারণে এখনো অভ্যন্তরীণ অনেক সমস্যা রয়েছে। ভবিষ্যতে এগুলো আরও বাড়বে। বিরোধ বাড়তে থাকলে দলের ভাঙনও আসন্ন হবে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম