চলে গেলেন কমরেড অজয় রায়
সুইটি ও মাসুদ আলম : গত শতকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা বর্ষীয়ান রাজনীতিক অজয় রায় চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন এই মানুষটি।
গতকাল সোমবার ভোরে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা এ রাজনীতিক জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক ছিলেন আপাদমস্তক সংগ্রামী এবং এদেশের মাটির সান্নিধ্যে মিশে থাকা মানুষ। মৃত্যুর পর তাকে যেন দাহ না করে সমাধিস্থ করা হয়Ñ এই ছিল তার শেষ ইচ্ছা। তিনি বলেছিলেন, এই দেশকে ভালবাসি, তাই মৃত্যুর পর এই দেশের মাটির সঙ্গে মিশে থাকতে চাই।
পারিবারিক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কাল বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য অজয় রায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মরদেহ রাখা হবে। দুই ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকায় কমরেড অজয় রায়ের মরদেহ আপাতত বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হচ্ছে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে রয়েছেন। তারা দেশে ফিরলেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিলেন স্ত্রী জয়ন্তী রায়।
নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলির পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাকে সমাধিস্থ করা হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জানান, ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সিপিবির সঙ্গে ছিলেন অজয় রায়। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক জানাচ্ছি। কমিউনিস্ট পার্টি ও মেহনতি মানুষের জন্য নানাভাবে অবদান রেখেছেন তিনি।
সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, অজয় রায় ছিলেন রাজনীতিতে আমাদের স্তম্ভ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আজ অবধি সবগুলো সংগ্রামেই অগ্রভাগে ছিলেন অজয় রায়। তিনি এদেশের সম্পদ।
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, অজয় রায় যে আলোক বর্তিকা আমাদের হাতে দিয়ে গেছেন সেটি আমাদের ধরে রাখতে হবে।
১৯২৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জন্ম নেন অজয় রায়। ভারতের বারানসিতে থাকাকালে স্কুলজীবনেই বামনেতাদের সংস্পর্শে এসে যুক্ত হন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। আইনজীবী বাবার মৃত্যুর পর ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন তিনি। এরপর কিশোরগঞ্জের বনগ্রামে দাদার বাড়িতে ফিরে কমিউনিস্ট পার্টির কাজে সক্রিয় হন।
২০১০ সালের পর ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তার নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এই পুরোধা ব্যক্তি। অজয় রায় সংবাদপত্রে কলাম লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিভিন্ন আন্দোলন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশকটি বই লিখেছেন।
রাজনৈতিক দল ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য জানান, নিউমোনিয়া, কিডনি, হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় অনেক দিন ধরেই ভুগছিলেন অজয় রায়। গত সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আনার কথাছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় তার মৃত্যু হয়। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম