‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ চালু হতে যাচ্ছে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই বৈধপথে ভারত যেতে পারবে বাংলাদেশিরা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : বাংলাদেশের নাগরিকরা পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই ভারতে যেতে পারবেন, দুই দেশের কর্তৃপক্ষ এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমাসের শুরুতে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ এর বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তের বিস্তৃতি বেশি হওয়ায় এবং দু-দেশের মধ্যে সম্পর্কের এবং আত্মীয়তারবন্ধন অনেক বেশি। ফলে পাসপোর্ট ভিসার জটিলতার কারণে তারা যোগাযোগ করতে পারে না। তাই মানবিক কারণে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তবে এই যাতায়াতের অনুমোদন হবে ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’। বর্তমানে মিয়ানমানের সঙ্গে বাংলাদেশের এই সুবিধা চালু রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে গত তিন বছর ধরে এই আলোচনা চলছে। এবারের বৈঠকেও আমরা মানবিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বিএসএফের বৈঠকে বলেচি, দুই দেশের সীমান্ত সম্পর্ক অনেক বেশি। দেখা গেছে, একইবাড়ির মধ্যে বোনের ঘরটা পড়েছে ভারতে, ভাইয়ের ঘরটা পড়েছে বাংলাদেশে। এক ভাইয়ের বাড়ি ভারতে তো আরেক ভাইয়ের বাড়ি বাংলাদেশে। পাসপোর্ট ভিসা জটিলতায় পড়ে পারাপার হতে গেলে আইন ভঙ্গ হয় এবং প্রায়ই এনিয়ে জেল খাটতে হয় নিরপরাধীদের। তাই এই আবেদন জানাতে হয়েছে।
আজিজ আহমেদ বলেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ নিয়ে দু’দেশের সীমান্ত সংলগ্ন অধিবাসীরা এপার-ওপারের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও ঘোরাফেরা শেষে ফিরে আসতে পারবে। ডিজি বলেন , বাংলাদেশের বেশিরভাগ সীমান্ত এলাকা জুড়েই ভারত। তাই ভারতের সঙ্গে এ পদ্ধতি চালু থাকা খুবই জরুরি। বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেই দুই দেশের নীতি নির্ধারকরা এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। খুব শিগগির এ বিষয়টিরও সমাধান হবে ।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ পদ্ধতি চালু হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ ছোটখাট অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে ভারতের সঙ্গে সীমান্তের দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। মিয়ানমার সীমান্তে ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ নামে স্বল্প সময়ের জন্য এপার-ওপারের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা চালু রয়েছে। ২৪ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘন্টা কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি সময়ের জন্য স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ নিয়ে দু’দেশের সীমান্ত সংলগ্ন অধিবাসীরা এপার-ওপারের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও ঘোরাফেরা শেষে ফিরে যায় এবং ফিরে আসে। এক্ষেত্রে দুই দেশের নাগরিকদের ইমিগ্রেশন থেকে তাদের ২৪ ঘন্টা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদের শট ট্রিপের জন্য একটা অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন নিয়ে তারা কক্সবাজার কিংবা আশে-পাশের এলাকায় ঘুরে ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে আবার চলে যায়। কতজন আসল আর গেলো শুধু সেটা তদারকি করে সীমান্ত কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের লোকজনও যখন মংডু বা ওইসব এলাকাতে যায়, তারা একটা স্বল্প সময়ের জন্য ভিজিট পারমিট পায়। কাজ শেষে আবার সেটা জমা দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে। এটা প্রতিদিনই হচ্ছে ওই সীমান্তে।
উল্লেখ্য ভারতের সঙ্গে শর্ট ট্রাভেল পারমিট না থাকায় ভিসা ছাড়া ওই পাড়ে কেউ গেলেই তা হয় অবৈধ। প্রচলিত আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একইভাবে ভারত থেকে কেউ অবৈধভাবে এলে বাংলাদেশের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এই জটিলতা এড়াতেই পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া শর্ট ট্রাভেল পারমিটের দিকে যাচ্ছে দুই দেশ। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু