ঠেকানই যাচ্ছে না ১০ টাকা চালের নানা অনিয়ম
দেলওয়ার হোসাইন: ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণের অনিয়ম ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরপরও ঠেকানই যাচ্ছে না অনিয়ম।
যে কুড়িগ্রাম থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির শুরু সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মাধ্যমে সচ্ছল পরিবারের মাঝে অধিকাংশ চালের কার্ড বিতরণের। এমনকি জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার দুটি আবাসন প্রকল্পে আশ্রয় নেওয়া ভূমিহীন হতদরিদ্ররা এ কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। চাল বিতরণে অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন খোদ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নজির হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও।
গতকাল মঙ্গলবার গাইবান্ধার ফুলছড়ি এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় ১০টাকা কেজি দরের ১৮৩ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১০ টাকার চাল বিক্রিতে অনিয়মের মাত্রা এতটাই বেশি যে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে হুঁশিয়ারি দিতে হয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ টাকার চাল বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সচ্ছল হয়েও যারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের কার্ড নিয়েছেন তাদের অবিলম্বে সে কার্ড জমা দিতে মাইকিং করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন উপজেলায়। গত দুদিন ধরে (সোমবার ও মঙ্গলবার) ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রুহিয়া, রায়পুর, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মাইকিং করা হয়। বলা হয়, এলাকার সচ্ছল ও অবস্থা সম্পন্ন কোনো লোক ভুল বুঝিয়ে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড গ্রহণ করলে যেন ওই কার্ড স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণে দরিদ্রদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দরিদ্রবান্ধব এ কর্মসূচিতে যারাই অনিয়ম করবে, তারা রেহাই পাবে না। চাল বিক্রির অনিয়মে যুবলীগ-আওয়ামী লীগের যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বেশকিছু অনিয়ম পেয়েছি, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে মনিটরিং টিম কাজ করছে। অভিযোগগুলো আসছে সাধারণত ডিলার, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এ কারণে ব্যবস্থাও নিচ্ছে বিভিন্ন জেলার স্থানীয় প্রশাসন। খুলনায় কয়েক জায়গায় চাল বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। এক ডিলার দম্পতির বিরুদ্ধে মামলাসহ ডিলারশিপ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। মুন্সীগঞ্জের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম কবির জানান, মাঠপর্যায়ে তদারকি নেই, এ অভিযোগ ঠিক নয়। প্রতিটি ডিলার সেন্টারে ট্যাগ অফিসার আছেন।
যশোরে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ রায়হান কবীর বলেন, চাল বিতরণের পর বিভিন্ন স্থান থেকে ধনী মানুষদের কার্ড দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ আসা শুরু হয়। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের কার্ড আটকে দেওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট ডিলারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেশবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন আলা বললেন, তড়িঘড়ি করে তালিকা প্রস্তুত করায় কিছুটা ভুলত্রুটি হয়েছে।
জয়পুরহাটে সম্প্রতি অনিয়ম রোধে জেলার ৩২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিব, ডিলার ও তদারকি কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন জেলা প্রশাসন। নেত্রকোনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. আব্দুর রহিম ১০ টাকার চাল নিয়ে অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্পাদনা: আনিসুর রহমান তপন।