*গুলশান হামলা-পরবর্তী সরকারের গৃহীত নিরাপত্তায় আমি অভিভূত : জিম ইয়ং কিম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় ২ বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
জাফর আহমদ: জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় দুই বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক আগামী তিনবছরে এ অর্থ দেবে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা অফিসে বিশ্বব্যাংকের গ্রুপ চেয়ারম্যান জিম ইয়ং কিম এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। এ সময় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক কিমিও ফানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। ক্রমবর্ধমান এ ঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্যদূরীকরণে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এ সাফল্য অর্জনে স্বাধীনতা-উত্তরকালে প্রায় ২৪ বিলিয়ন অর্থ সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আগামীতেও এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী তিনবছরে ৩ বিলিয়ন দেবে। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন দেওয়া হবে জলবায়ু খাতে ও এক বিলিয়ন দেওয়া হবে শিশু পুষ্টিতে।
ঢাকায় সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা পরবর্তী নিরাপত্তায় গৃহীত বাংলাদেশের পদক্ষেপে অভিভূত বলে জানান জিম ইয়ং কিম। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে। বিনিয়োগের পরিবেশ অব্যাহত রাখতে হলে বর্তমানের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ জোরদার ও মাঝে মাঝে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দারিদ্র্যদূরীকরণ ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলা এক সঙ্গে করছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উদহারণ টেনে তিনি বলেন, ঘরে খাদ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো পর্যন্ত নিশ্চিত করেছে। এসব মানুষ সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও কর্মসূচির পাশাপাশি নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে নিজেরা ভূমিকা রাখছে।
দুর্নীতির প্রশ্নে আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানান জিম ইয়ং কিম। বিশ্বের যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্বব্যাংক। ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতে কোনো দুর্নীতি হলে কি করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে কিম বলেন, বাংলাদেশে আমাদের অনেক প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি যেন না হয়, সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জল। বাংলাদেশ অনেকগুলো লক্ষ্য সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সপ্তম-পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশকিছু পদক্ষেপ তারা হাতে নিয়েছে; যা ইতিবাচক। যার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো, বিচারব্যবস্থা ও সরকারি ব্যাংকের স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে রাজস্ব আদায়ের হার বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের টিম (বিশ্বব্যাংক) দুদিন ধরে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন সম্পর্কে জেনেছে। এরপর আমরা বলতে পারি, ভবিষ্যতের উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, অধিক থেকে অধিকতর কাজের সুযোগ সৃষ্টি এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে সব ধরনের সহায়তা করব এবং পাশে থাকব।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডন্টে জিম ইয়ং কিম দুদিনের বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক আয়োজিত একটি কর্মসূচিতে যোগদান ও বরিশালের বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বরিশালে একটি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে গতকাল বিকালে এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর গত রাতেই জিম ইয়ং কিম ওয়াসিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন