রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলছে নতুন স্নায়ু যুদ্ধ
নূসরাত জাহান : স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক সার্বিকভাবে কতটা খারাপ ছিল তা অনেকের চিন্তার অতীত। শক্তিশালী দেশ দুটোর মধ্যে প্রায় সময়ই স্নায়ু যুদ্ধ লেগে থাকে। কখনও এর মাত্রা বেশি, কখনও কম। সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুদেশ ঐকমত্যে পৌঁছলেও শেষ পর্যন্ত আলেপ্পোয় হামলায় চালানো নিয়ে দুদেশের মধ্যে শুরু হয় স্নায়ু যুদ্ধ।
আলেপ্পোয় রাশিয়া-সিরিয়া বাহিনীর যৌথ হামলাকে মার্কিন কর্মকর্তারা ‘বর্বরোচিত’ বলে অভিহিত করেছেন। তারা এ হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলেও অভিহিত করেছেন। হামলা না চালানোর ব্যাপারেও তাদের সতর্ক করে দিয়েছে।
রাশিয়াও কম যায় না। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও ওয়াশিংটন-মস্কোর মধ্যকার তিক্ত সম্পর্ক নিয়ে বিশদভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, ওবামা প্রশাসন আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি করতে চায় না। তারা চায় জোর করে তাদের মতো কাজ করিয়ে নিতে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেও দুই দেশই সিরিয়া ইস্যুতে এখনও যোগাযোগ রাখছে। কাজও করে যাচ্ছে। দুই দেশের কৌশলগত নীতি আসলে কী তা হয়তো স্পষ্ট নয়, তারপরও সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্যই যে যার জায়গা থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ সিরিয়া সংকট জিইয়ে রাখলে মস্কো কিংবা ওয়াশিংটন কারোই আখেরে লাভ হবে না।
সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কাজ করতে চাইছে। তবে দুই দেশের মধ্যে নেই কোনো আস্থা ও বোঝাপড়া। এই দুটো বিষয় ছাড়া আলোচনা কিংবা কোনো উদ্যোগ নিলে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
স্নায়ু যুদ্ধের পর থেকেই এক নতুন যুগের সূচনা হয়। একটা সময় পর্যন্ত রাশিয়া বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নই ছিল। ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। রাশিয়া তার হারানো অবস্থার পুনরুদ্ধার করে এবং নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে। আর যুক্তরাষ্ট্র তো বিশ্বে একটা অবস্থান এরইমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে। তাহলে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যে কেন এত বিভেদ? সমস্যাটা আসলে কোথায়? বারবারই কেন বিভেদে জড়িয়ে পড়ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বর্তমান সর্ম্পককে তাই ‘নতুন স্নায়ু যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর ফেলো এবং সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা পল পিলার বলেছেন, ‘প্রাথমিক সংকট আসলে পশ্চিমাদের মধ্যে। পশ্চিমারা যখন রাশিয়াকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে চায় না অর্থাৎ রাশিয়াকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশ হিসেবে মনে করে না তখনই সমস্যা শুরু হয়। রাশিয়াকে নতুন দেশ হিসেবে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তারা যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি সেটাও মনে রাখতে হবে। পশ্চিমারা যতদিন এই সত্যটি মেনে নিতে পারবে না ততদিনই সমস্যা চলবে।’
মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমাদের অবশ্যই নতুন রাশিয়াকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। রাশিয়াকে অন্যান্য দেশে সঙ্গে তুলনা করে আচরণ করলে সমস্যার সমাধান কখনই হবে না, দুই দেশের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধেরও শেষ হবে না। সূত্র: বিবিসি। এফএ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী