পলি বিক্রি করবে বাংলাদেশ!
শান্তনূ : নদীর তলদেশে জমা পলি বিক্রি করবে বাংলাদেশ। এই পলি কিনতে ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে প্রস্তাবও দিয়েছে দু-একটি রাষ্ট্র। ফলে যা কিছুদিন আগে দেশের জন্য বোঝা ছিল তা এখন দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হতে চলেছে। যায়যায়দিন
নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে সচল হয়ে উঠবে নদীগুলো। ফিরে আসবে নদীতে জোয়ার-ভাটা। ক্ষেত্রবিশেষে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে বিদেশিদের এই বিনিয়োগ।
এ প্রসঙ্গে পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, নদনদীর তলদেশে জমা পলিমাটি রপ্তানির বিষয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা চলছে। তারা এখানে এসে নদী খনন করে পলি নিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে একদিকে নদী খননের কাজও হবে, আবার বিদেশি অর্থও আসবে। তিনি বলেন, বন্যার সময় স্রোতের সঙ্গে এসে প্রচুর পলিমাটি জমে। এতে দ্রুত নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। আর নদীর আশপাশের তীরভূমির উচ্চতাও বাড়ছে। বন্যা বা জোয়ারের পানির উচ্চতা অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যমান বাঁধগুলো ছুঁয়ে যায়। তাই এখন থেকে সব বাঁধ উঁচু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এমনিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে দেশের অনেক নদ-নদী। নদী বাঁচাতে খননে খননে দিশেহারা সরকার। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও নদীর তলদেশ ভরাট হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। খননকাজ আরও জোরালো করতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো খননযন্ত্র সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আবার নদীর তলদেশ থেকে তোলা পলিমাটি রাখারও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সেই পলিমাটিই এবার খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার নতুর দুয়ার। ইতোমধ্যে দেশের উর্বর পলিমাটি নিতে প্রস্তাব দিয়েছে কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ‘মালদ্বীপ’ এবং আধুনিক শহর হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয়া ‘সিঙ্গাপুর’ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবের মধ্যে গরমিল রয়েছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাব মতে দেশে শাখা-প্রশাখা মিলিয়ে নদীর সংখ্যা ৩১০টি। আর নদী রক্ষায় গঠিত কমিশনের হিসাব মতে, দেশে প্রধান নদ-নদীর সংখ্যা ৫৭টি। এর মধ্যে ৫৪টি নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাকি তিনটি নদী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। তবে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা যাই হোক না কেন গত ২০০ বছরে দেশের নদ-নদীর গতি-প্রকৃতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে অনেক নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। অনেক নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। আবার অনেক নদী দখল-দূষণের কারণে বৈচিত্র হারিয়ে ফেলেছে।
দেশ স্বাধীনের পর বিআইডব্লিউটিআইয়ের পক্ষ থেকে যে জরিপ চালানো হয়েছিল তাতে দেশে নৌপথের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। আর সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে দেশের নৌপথের পরিমাণ দেখানো হচ্ছে মাত্র চার হাজার কিলোমিটার। তাও আবার শুষ্ক মৌসুমে এর পরিমাণ আরও নিচে নেমে যায়। ফলে স্বাধীনতার ৪৪ বছরে দেশে নৌপথ কমেছে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার।
নদী পথ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো ১ দশমিক ২ বিলিয়ন টন পলি বহন করছে। এই অতিরিক্ত পলিতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্য সংকট তৈরি করছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানিতে পাড় উপচে সৃষ্টি করছে বন্যার। আবার একই কারণে শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে নাব্য থাকে না বললেই চলে। পলি পড়ে ভরাট হওয়ার কারণে শুধু বর্ষা মৌসুম ছাড়া এসব নদীতে পানি থাকে না।
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিমাটি বিদেশে বিক্রি করা গেলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে দেশ। সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি ও পোশাকশিল্পের মতো এই খাতটিও সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম