হারাতে পারে বিরোধী দলে যাওয়ার সুযোগ আগামী নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টিতে ভাঙন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: জাতীয় পার্টি তিন নেতার পকেটে। তিনজন যে যার মতো করে জাতীয় পার্টিকে চালাতে চাইছেন। এ জন্য পার্টিকে কয়েকভাগে বিভক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। ভাঙনের সুযোগও তৈরি করা হয়েছে। নেতারা তাদের পছন্দের নেতাদের পিছনে রয়েছেন। তারা যা বলছেন সে হিসেবে কাজ করছেন। একজন আরেকজনের প্রাধান্য বিস্তার করছেন। এতে করে নেতা ও কর্মীদের গ্রুপিং তৈরি হওয়ায় দলের ঐক্য নষ্ট হচ্ছে ও নেতাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে।
গ্রুপিং বাড়ছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি মামলার ভয়ে ভীত। এ কারণে সরকারি বাধ্যতাবাধ্যকতার বাইরে যেতে পারছেন না। আগামী নির্বাচনের আগে চেষ্টা করবেন দলকে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কিছু করার। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনাও করতে চান। কিন্তু তিনি অনেক সময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। তিনি সত্যি কথা বলতে গেলেও সরকারের রোষানলের শিকার হতে পারেন। এ জন্য আপাতত চুপচাপ থাকছেন। দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ নিতে পারছেন না। যখনই কথা বলছেন তখন তার উপর চাপ আসছে। সে চাপ সামাল দিতে গিয়ে তিনি আবার পিছু হটছেন। এ কারণে এখন বিরোধী দলে থাকলেও বিরোধী কোনো ভূমিকা নেই। এরশাদ চেষ্টা করেছেন আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করতে কিন্তু পারছেন না। তার উপর নানা দিক থেকে চাপ আছে।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, এরশাদ চেয়ারম্যান। দলের প্রধান নেতা। তিনি চেষ্টা করছেন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার, আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে তৈরি করার। কিন্তু পারছেন না। যতবার যেতে চেয়েছেন ততবারই তাকে চা খাওয়ানোর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে চা খাওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। তিনিও সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। তার স্ত্রী রওশনেরও এ ব্যাপারে চাপ রয়েছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ রয়েছে এরশাদের উপর। তবে মামলার ভয়ে তিনি ভীত। তার পক্ষে বেশিদূর এগোনো সম্ভব হচ্ছে না।
জাতীয় পার্টির একজন নেতা যিনি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির আরেক নেতা রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, রওশন এরশাদ এরশাদকে চাপে রেখেছেন। তিনি যাতে সরকারের বিরুদ্ধে যেতে না পারেন সে জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। রওশন চান যত যা কিছুই হোক সরকারের সঙ্গে থাকলে। সরকারের সঙ্গে কোনো বিরোধ তৈরি করবেন না। তার মতে, জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে থাকলে সুবিধা বেশি। এতে সুবিধা ছাড়াও দলের একাধিক নেতাকে মন্ত্রী রাখা যায়। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে সরকারের অনুগত দল হিসেবেই তিনি নির্বাচনে নিয়ে যেতে চান। সমঝোতা করেই এবারের মতো বিরোধী দলে বসতে চাইছেন। এ জন্য তিনি সব রকম চেষ্টা করছেন। রওশনের হিসাব তার পন্থি নেতারা বিশ্বাস করলেও অন্যরা এটা মেনে নিচ্ছেন না।
একজন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে বিরোধী দলে বসতে হলে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই জাতীয় পার্টিকে এগোতে হবে। বিপ্লব করে সরকারের বিরোধিতা করে লাভ হবে না। ধীরে চলা নীতি অনুসরণ করছেন রওশন। তবে তার এ নীতি পছন্দ করছেন না পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জাতীয় পার্টির তিন নেতার একজন জি এম কাদের। সূত্র জানায়, তিনি চান সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে। সেটা পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন। তবে সাফল্য আসবে কিনা এটা বলা যাচ্ছে না। তার পিছনে কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তিনি বিএনপি জোটে থেকেও সুবিধা নিতে পারেন।
তিনি বলেন, তিন নেতার কারণে জাতীয় পার্টিতে এখন ত্রিমুখী লড়াই চলছে। এ অবস্থায় নেতারা যেমন সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছে না, কার সঙ্গে থাকবেন সেটাও চূড়ান্ত করতে পারছেন না। সেই জন্য তাদের অনেকের মধ্যে হতাশাও বিরাজ করছে। আবার মন্ত্রীদের এরশাদ কেবিনেট থেকে সরানোর চেষ্টা করেছেন। পদত্যাগ করার কথা বলেছেন। কিন্তু তার কথা কেউ শুনেননি। শুনবেন তেমন কোনো লক্ষণ নেই। এখন আপাতত জাতীয় পার্টি চলছে। তবে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখার কোনো পরিকল্পনা যেমন নেই তেমনি সাংগঠনিক ভিত্তিও সুদৃঢ় করা যাচ্ছে না।
জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, তিন নেতার আধিপত্য ও কাইজ্যা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টি বিভক্ত হয়ে যাবে। এখন যে অস্তিত্ব আছে তা থাকবে না। বিলীন হয়ে যাবে। এতে করে আগামীতে বিরোধী দলেও বসতে পারবে না। কারণ এটা আমাদের মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে। বিএনপি অংশ নিলে জাতীয় পার্টিকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। বিরোধী দলে যাওয়ার স্বপ্নও শেষ হয়ে যাবে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমি আমার দলের সাংগঠনিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে চাই। দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সব করব। তিনি বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি আমার দলের ক্ষমতায় আসার। সে হিসেবে চেষ্টা করছি। তিনি তিন নেতার দ্বন্দ্ব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। রওশন এরশাদ এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে নারাজ। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম