কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক মুলতবি অন্ধকারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, কারা থাকছেন আর কারা বাদ পড়ছেন কোনো ইঙ্গিতও মেলেনি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: আসন্ন আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে অনেকটাই অন্ধকারে রয়েছেন দলের বেশিরভাগ জেষ্ঠ্য নেতা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও কমিটির বিষয়ে কি ঘটতে যাচ্ছে সেই আভাস পাননি নেতারা। এ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
বিশেষ করে দলের সিনিয়র নেতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। কারণ এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী গত একমাসের দলের নির্বাহী পরিষদ সভা ও জাতীয় কমিটির সভায় একাধিকবার বলেছেন, তিনি নতুন নেতৃত্বের হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দিতে চান। আজ ছিলো সম্মেলনের আগে দলের শেষ কার্যনির্বাহী পরিষদ বৈঠক। নেতারা প্রত্যাশা করেছেন, কমিটিতে থাকার ব্যাপারে নেত্রী ( শেখ হাসিনা) গ্রিনসিগন্যাল দেবেন। কারণ ধারণা করা হচ্ছে এটাই দলের শেষ বৈঠক।
দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কাউন্সিলের আগে গতকাল (বুধবার) কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। আমরা সবাই আশা করেছিলাম নেত্রী বলবেন কমিটি নিয়ে। তিনি শুধু বলেছেন, বিগত সময়ে যারা ভালো কাজ করেছেন তারা অবশ্যই কমিটিতে থাকবেন। কিন্তু কারা থাকছেন সেটি বলেননি শেখ হাসিনা। তিনি শুধু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলেছেন। আর ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করেছেন এবং কমিটির পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন।
জানা গেছে, বৈঠকে সদস্যরা বেশ আশা নিয়ে ছিলেন শেখ হাসিনা বলবেন কারা কমিটিতে থাকছেন আর কারা বাদ পড়ছেন। কিন্তু তা এবার ঘটেনি।
কমিটির সম্পাদকম-লীর একাধিক সদস্য হতাশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন কমিটি ঘোষণার আগে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আর সভা ডাকা হবে না। ধরে নিতে পারি দলের এটাই শেষ আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এই বৈঠকেই অনেক নেতা বর্তমান কমিটির সদস্যরা বিদায় নিয়েছেন শেখ হাসিনার কাছ থেকে।
সভায় যোগ দেওয়া একাধিক সদস্য বলেন, কমিটি নিয়ে কিছুই বলেননি সভাপতি। অথচ প্রতিটি সম্মেলনের আগেই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হলে আশ্বাস দিতেন অথবা না রাখতে পারলে অন্য জায়গায় পদায়ন করবেন বলে সরাসরি বলে দিতেন। তবে এবারই ব্যতিক্রম। তিনি কেবল সম্মেলন কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। পদ-পদবিতে থাকার বিষয়ে আকার-ইঙ্গিত দিলেও সভানেত্রী কোনো কথা বলেননি।
কমিটির সদস্যরা বলেন, এবার সভাপতি ছাড়া কেউ জানে না কমিটির কি হবে। সবাই অন্ধকারে।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেছেন, বৈঠকে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অতীতে দেখা গেছে সম্মেলনের আগে দলের নেতাদের মধ্যে দলাদলির সৃষ্টি হতো। এবারই প্রথম প্রকাশ্যে কোনো দলাদলি নেই। কেউ কোনো পদে প্রার্থী নন।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বৈঠকে দলের পদ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে অভূতপূর্ব সাড়া জেগেছে।
আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, আগের ঘোষণাপত্র অনেকাংশেই আমরা বাস্তবায়ন করে ফেলেছি। জনসংখ্যা বাড়ছে, সেজন্য গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন আনতে হবে।
আওয়ামী লীগের পরবর্তী গঠনতন্ত্রের খসড়ায় সভাপতিম-লীর চারজন সদস্য, কার্যনির্বাহী সংসদের দুজন সদস্য এবং একজন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এই বৈঠক দলটির বর্তমান কমিটির সর্বশেষ বৈঠক। তবে আজ শেষ তা হবে না, পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত এই বৈঠক মুলতবি থাকবে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পর এই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে জানান শেখ হাসিনা। কাউন্সিলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে এই বৈঠক বসবে বলে জানান তিনি।