শিশুদের ক্ষমা ও উদারতার শিক্ষা দিন
হুমায়ুন আইয়ুব : যে সব নান্দনিক চরিত্রে শিশুকে প্রতিপালিত করা উচিত তার অন্যতম হলো ক্ষমা ও উদারতা। এর তাৎপর্য বর্ণনায় কুরআন ও হাদিসের অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। যেমন: আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যে ক্ষমা করে দেয় ও আপস নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে।’
আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন- অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, নিশ্চয়ই তা দৃঢ় সংকল্পেরই কাজ।’ তেমনিভাবে মন্দের সমপরিমাণ মন্দ দ্বারা প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। যেমন : আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন-‘মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।’ আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।’
শরিয়তের প্রমাণ তারই প্রশংসা করে যে অত্যাচারীর প্রতিবিধান করে। আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন এবং যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে।’
অতএব ক্ষমা ও উদারতার মতো চরিত্র মাধুর্য একান্তভাবে কাম্য। যেমনিভাবে প্রতিশোধ ও প্রতিবিধানের চরিত্রও কাম্য। এর যে কোনো একটাকে উপেক্ষা করলে অথবা তার আশ্রয় না নিলে জীবন প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। যখন অধিকাংশ অভিভাবকের চিন্তা-চেতনা শিশুর মনে ক্ষমা ও উদারতার মর্মবাণী দৃঢ়মূল করতে বদ্ধ পরিকর, তখন তাদের মধ্যে অত্যাচারী ও স্বেচ্ছাচারীদের প্রতিশোধ ও প্রতিবিধান করার মর্মবাণীও তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর হতে হবে। আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমার অজ্ঞাতসারে জয়নব (রা.) অনুমতি ব্যতিরেকে ক্রদ্ধাবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে। এরপর তিনি বললেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল, আবু বকরের কন্যা তার হাতের দুটি কংকন দিয়ে দিয়েছে তাতেই কি আপনি সন্তুষ্ট? অতঃপর তিনি আমার দিকে ফিরলে আমি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। এমন কি রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেই ফেললেন- ‘যাও! তুমি গিয়ে প্রতিশোধ নাও।’ এরপর আমি তার দিকে মুখ করে তাকাতেই দেখি তার মুখ শুকিয়ে গেছে, ফলে আমার কোনো প্রতি উত্তরই তিনি আর করতে পারলেন না। অতঃপর আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) মুখম-লে প্রফুল্লতা লক্ষ্য করলাম।’ দেখুন, এখানে যয়নব (রা.) যখন আয়শা (রা.)-এর প্রতি অবিচার করলেন তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে প্রতিবিধান করার নির্দেশ করলেন। ক্ষমা ও উদারতার নির্দেশ করেননি। বরং তার মুখম-লে প্রফুল্লতা তখন পরিস্ফুটিত হয়েছে যখন তার অধিকার আদায় করে নিতে দেখলেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তার এক স্ত্রীর কাছে ছিলেন, তখন আমাকে তার আরেকজন স্ত্রী একটি পাত্রভর্তি খাবার নিয়ে পাঠালেন। তখন তিনি যে স্ত্রীর ঘরে ছিলেন তিনি আমার হাতে আঘাত করেন; ফলে পাত্রটি হাত ফসকে পড়ে ভেঙে যায়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) পাত্রটির টুকরাগুলো একত্রিত করলেন, এরপর পাত্রের মধ্যে যে খানা ছিল তাও একত্রিত করতে লাগলেন ও বললেন- ‘তোমাদের মা অতর্কিত আক্রমণ করেছেন। অতঃপর সেবক (আনাস (রা.) খুব সতর্কতার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) যার ঘরে ছিলেন সেখান থেকে একটি ভালো পাত্র নিয়ে আসলেন। আর ভাঙা পাত্রটি যে ভেঙেছে তার ঘরেই রেখে দিলেন।’ সম্পাদনা: সুমন ইসলাম