ভেজাল রোধে সরকার একদম কঠোর: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ৩০ অক্টোবর থেকে পেট্রল পাম্প ও ট্যাংক লরি বন্ধের হুমকি
রিকু আমির: আগামী ৩০ অক্টোবর ভোর ৬টা থেকে দেশের সব পেট্রল পাম্প ও ট্যাংক লরিতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনিয়োগ ও শ্রম প্রদান বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
যদি ১৯ অক্টোবর থেকে ১০ দিনের মধ্যে ১২ দফা দাবি পূরণ করা না হয়, তবেই এ কর্মসূচি পালনের হুমকি দেন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাজমুল হক। গতকাল বুধবার দুপুরে মতিঝিলে হোটেল পূর্বাণীতে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, সরকারের সঙ্গে আমরা বারবার চেষ্টা করেছি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে সরকার যে আচরণ করেছে, তাতে আমরা অপমানিতবোধ করেছি। সমস্যাগুলোর সমাধান পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে।
জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বুধবার বিকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের কাছে তারা এসেছিলেন, দাবি পেশ করেছেন। আমরা ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। এসব দাবি দিয়ে যদি ভেজালবিরোধী অভিযান বন্ধ করতে চায়, সেটা সরকার মেনে নেবে না। পেট্রল পাম্পে যে তেল ভেজাল করছে, মাপে কম দিচ্ছে, চুরি করছে- এসবের কোনোটিই সরকার মেনে নেবে না। এসবের বিরুদ্ধে সরকার কাজ করবেই। ইতোমধ্যে কিছু পেট্রল পাম্প বন্ধ করা হয়েছে, এটা চলমান থাকবে, ডিলারশিপই বাদ দেওয়া হবে। এটাকে যদি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সরকারকে তারা আল্টিমেটাম দিলেও সরকার তার সিদ্ধান্তের জায়গায় অটল’।
পদ্মা-যমুনা কোম্পানির তেলে ভেজাল। সেটা দূর করলেই তেলে ভেজাল দূর করা হবে। আমাদের পিছনে লেগে লাভ নেই। বর্তমানে অভিযানের নামে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছেÑ সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নাজমুল আলমের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘তারা ভেজাল তেল না নিলেই পারে। আর তারা তো তেল পরীক্ষা করেই নিচ্ছেন, তাদের দায়িত্ব তারা তেল পরীক্ষা করে নেবেন। না নিলে নেবে না। আসল কথা হচ্ছে- তারা বিক্রির জায়গায় তেলে ভেজাল করছে, এরকম বহু প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। ভেজাল রোধে আমরা একদম কঠোর’।
দফাগুলো হচ্ছেÑ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ইজারা মাশুল অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল; ট্যাংক লরিকে পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা; বাস্তবতার নিরিখে তেল বিক্রয়ের কমিশন ও ট্যাংক লরি ভাড়া বৃদ্ধি করা; প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংক লরি শ্রমিকদের পাঁচ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা প্রথা প্রণয়ন; অপারেশন লস্, ইভাপোরেশন লস্ এবং বিএসটিআই টলারেন্স মাত্রা যৌক্তিক হারে নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা করে পুনঃনির্ধারণ করা; ব্রিজগুলো টোল আদায়ের ক্ষেত্রে ট্যাংক লরির টোল যৌক্তিক হারে নির্ধারণসহ ফেরিঘাট পারাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া; ভেজাল রোধে প্রত্যেক ডিপোতে আরওএন টেস্ট ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেসরকারি রিফাইনারি কর্তৃক বাজারে তেল বিক্রি বন্ধ করা; সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিদ্যমান ট্যাংক লরি টার্মিনাল সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় স্থানে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ; পেট্রল পাম্প স্থাপন নীতিমালা পুনর্বিন্যাস করা; ট্যাংক লরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা; পেট্রল পাম্প পরিদর্শনকালীন বিপিসি ও অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করা, বিএসটিআই টলারেন্স মাত্রার হার যাচাই করে তা পুনঃনির্ধারণ না করা পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখা। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম