‘জনগণ বলছে হায়রে, আমাদের টাকায়, দুর্নীতির টাকায় সম্মেলন হচ্ছে’
শাহানুজ্জামান টিটু: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। বুধবার থেকে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকা, সড়ক দ্বীপ, রাস্তার দুপাশে শোভা পাচ্ছে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিশাল ছবি সম্বলিত বিল বোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন। এছাড়া শাহবাগ মোড়সহ নানা স্থানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশদ্বার বিশেষ করে শনিড়আখড়া ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশে স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার সৌজন্যে বসানো হয়েছে কাউন্সিল সফল সংবলিত তোরণ। এছাড়া মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের দুপাশের লাইটপোস্টগুলোতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলানো হয়েছে। আর মূল কাউন্সিল স্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে মঞ্চ প্রস্তুতি ও আনুষাঙ্গিক নানা কর্মকা-।
ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলন ঘিরে এ আয়োজন নিয়ে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি বিএনপি তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সফলতা কামনা ও এর মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব আশা করেছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের বিশাল আয়োজন নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। দুর্নীতির টাকায় আওয়ামী লীগ সম্মেলন করছে, বিশাল গেট করছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। এ সম্মেলন জনগণের কাছে কীভাবে প্রতিপাত হচ্ছে, সেটা একবার সার্ভে (জরিপ) করে যদি আপনারা দেখেন, তাহলে বুঝবেন জনগণের যে প্রতিক্রিয়া, গেটটা দেখেই বলে, হায়রে, আমাদের টাকায় এ সম্মেলনটা হচ্ছে। আমাদের টাকায়, দুর্নীতির টাকায় এ সম্মেলন হচ্ছে। এটা মানুষের মনের কথা। এটা জোর করে আওয়ামী লীগ সরাতে পারবে না।
অবশ্য এ বিষয়ে অনেকটা সহনীয় মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সফলতা কামনা করে বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের সমর্থ ও পরিবেশ অনুযায়ী তাদের সম্মেলন ও কাযর্ক্রম করবেন। এটাই স্বাভাবিক।
অপরদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে তিনি কঠোর সমালোচনা করেছেন কাউন্সিলে ঢাকা শহরকে সজ্জিতকরণসহ বিশাল খরচ নিয়ে। দুদু বলেন, এটার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এখন মোটা চালের দাম ৪০ টাকার উপরে। মানুষের কাজ কর্ম নেই, মানুষ এখন বুভুক্ষু। কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। দেশে কোনো শান্তিপূর্ণ পরিবেশও নেই। জঙ্গি হামলায় মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। সেই সময় ঢাকায় দুদিনব্যাপী আলোকসজ্জা, অমুক-তমুক করানোÑ এটা আমার মনে হয় না শুভবুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি বলেন, তারপরও তারা করছে। সরকারি দলের বিভিন্ন জায়গায় যে লুটপাট, স্বাভাবিক কারণে ব্যাংকের যে অনিয়ম, টাকা-পয়সা সরকারি দলের লোকজনের হাতে আছে। তারা খরচ করবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সেজন্য আলাদাভাবে আমাদের কিছু বলার নেই।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে আমরা কোনো তীর্যক মন্তব্য করতে চাই না। বিএনপির কাউন্সিলের জায়গা নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে এবং বিএনপি ও বিএনপির অর্থ সম্পর্কেও কথা বলেছেন। আপনারা দেখেছেন বিএনপি একদিনের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে অতি অল্প খরচে বিএনপি তার কাউন্সিল সম্পন্ন করেছে। কিন্তু পত্রপত্রিকায় যা দেখছি। আওয়ামী লীগ সারা ঢাকা শহর আলোক মালায় সজ্জিত করবেন, ঢাকা শহরকে সাজাবেন। দুদিনে সারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ব্যবহার করবেন এবং শুনছি দুই কোটি টাকার বেশি বাজেট নিয়ে নামা হচ্ছে। এ টাকার ব্যবস্থা কোথা থেকে হবে। কারা তাদের এই অর্থ দেবে। সে অর্থ কতটুকু স্বচ্ছতা। সে অর্থ জোগান হবে বা যারা দেবে তারা সেই অর্থ কোথা থেকে পেয়েছেন। সেই অর্থ আয়কর দেওয়া কিনা, সেটা কোনো স্বচ্ছ অর্থ কিনা, এটা এখনই বলার সময় আসেনি।
তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় যা দেখছি সেগুলো থেকেই আমি উদ্ধৃত করলাম। তাতে করে ভবিষ্যতে যদি এমনটাই হয় যে পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ এবং দুদিনব্যাপী ঢাকা শহরকে সাজিয়ে দেওয়া হয় এত টাকা সংস্থান কোথায় এবং একটি গরিব দেশে এত টাকা কোথা থেকে আসবে সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসবে। এটা বলার সময় যদিও আসেনি। এত ব্যয়বহুল সম্মেলন আমাদের মতো নিম্ম আয়ের দেশে এখন উচিত কিনা তা নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন পর্যবেক্ষক মহল ও রাজনৈতিক মহলে সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি আশা করব আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং স্বভাবসুলভ কথাবার্তা এবং রাজনীতি সংস্কৃতি অব্যাহত রাখবে। পরমত ও গণতন্ত্রকে সহিষ্ণুতার সাথে গ্রহণ করার মানসিকতা প্রতিশ্রুতি আমরা তাদের কাছ থেকে আশা করব। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম