মাওলানা দিদার-উল আলম
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয় আর জামায়াতে নামাজ আদায়ের আগে দেওয়া হয় ইকামাত। আজান এবং ইকামাত শুনলে ধর্মের নিয়মানুযায়ী জবাব দিতে হয় আর এ জবাবের জন্য রয়েছে পূণ্য। আমরা আজানের জবাব দিলেও ইকামাতের জবাব হয়তো অনেকেই দেই না। কেউ কেউ শুধুমাত্র আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ-এর জবাব দিয়ে থাকেন। যারা ইকামাতের জবাব দিতে হবে জানেন এবং জবাব দিতে সচেষ্ট, তারা কিন্তু পুরো জবাব দিতে সক্ষম হন না অনেক ইমাম সাহেব আর খতিব সাহেবদের অসচেতনার কারণে। কারণ মুয়াজ্জিন সাহেব ইকামাতের শেষ শব্দ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার আগেই অধিকাংশ ইমাম সাহেব আর খতিব সাহেব তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে থাকেন। এক্ষেত্রে নিজে তো ইকামাতের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না, মুসল্লিরাও জবাব দেওয়ার সুযোগ পান না। মুয়াজ্জিনের ইকামাতের শেষ শব্দ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শেষ না করতেই ইমাম/খতিব সাহেব আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করে দেন, এ দৃশ্য কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায়। ইকামাতের শেষ শব্দ উচ্চারণের একদম সঙ্গে সঙ্গেই তাকবিরে তাহরিমা আল্লাহু আকবার বলতে হবে, এটাই কি ইসলামের প্রকৃত নিয়ম? এভাবে কি সওয়াব থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না নিজেকেসহ মুসল্লিদের?
আজান ও ইকামাত শুনে জবাবে কি বলতে হবে তা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আজানের জবাব সম্পর্কে মুসলিম ও আবু দাঊদে বর্ণিত হাদিস হচ্ছে, উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ‘মুয়াজ্জিন বলবে, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার তখন তোমাদের কেউ যদি বলে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; এরপর যখন মুয়াজ্জিন বলে, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে বলে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; এরপর যখন মুয়াজ্জিন বলে, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, সেও বলে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুলল্লাহ সা., পরে মুয়াজ্জিন যখন বলে, হাইয়্যা আলাস সালাহ্, সে বলে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ; পরে মুয়াজ্জিন যখন বলে, হাইয়্যা আলাল ফালাহ, সে বলে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ; এরপর মুয়াজ্জিন যখন বলে, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, সে বলে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; পরে মুয়াজ্জিন যখন বলে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে তখন বলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এ বাক্যগুলো যদি অন্তর থেকে বলে তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’
আর ইকামাতের জবাব সম্পর্কে আবু দাঊদে বর্ণিত হাদিস হচ্ছে, আবু উমামা আল-বাহিলি রা. অথবা রাসূলুল্লাহ সা.-এর অন্য কোনো সাহাবি থেকে বর্ণিত যে, ‘বেলাল রা. ইকামত দিচ্ছিলেন। যখন তিনি কাদ ক-মাতিস্ সালাহ বললেন, তখন রাসূল্ল্লুাহ সা. বললেন, আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহ অর্থাৎ আল্লাহ তা প্রতিষ্ঠিত রাখুন এবং তা চিরস্থায়ী করুন)।
বর্ণনাকারী আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইকামাতের অন্যান্য শব্দের বেলায় হজরত উমর রা. থেকে বর্ণিত আজানের হাদিসের অনুরূপ বলেছেন। হাদিসদ্বয় থেকে প্রমাণিত যে, আজানের ন্যায় ইকামাতের জবাব দিতে হবে।