ফেসবুক-নেট আসক্তি থেকে বাঁচার উপায়-ধর্মীয় আমল
আলী আব্দুল মুনতাকিম
আল-জাজিরা, বিবিসি, সিএনএনসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য এখন শিশু-কিশোরদের ফেসবুক আসক্তি-নেশা এবং এর থেকে ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে বারংবার প্রতিবেদন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ২-১টি চ্যানেল ইতোমধ্যে প্রচার শুরুও করেছে, যা আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তবে আসক্তির যে মহামারি শুরু হয়েছে তার তুলনায় প্রচার কম। সম্ভবত বিবিসিতে দেখলাম, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজের মাঠে-বারান্দায় সারাক্ষণ বসে মোবাইলে চোখ রাখছে। কেউ চ্যাটিং করছে, ফেসবুক চালাচ্ছে, স্কাইপি-ভাইবার-ইমুতে কথা বলছে, না হয় ছবি আদান-প্রদান করছে। ইউরোপ-আমেরিকার কিছু বিখ্যাত স্কুল-কলেজের এই ভয়াবহ চিত্র দেখানো হলো। কোনো বিরাম নেই, খাওয়া নেই, নাস্তা-পানির কথা ভুলে যায়, শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। তার উপর রয়েছে অশ্লীল ছবির ছড়াছড়ি। গাজা-ইয়াবা-হিরোইন সবকিছুকে ছাড়িয়ে এখন ফেসবুক আর নেটের নেশায় তরুণ সমাজ বুদ হয়ে আছে। সকলের ফেস যেন বুকড হয়ে গেছে। তাই আমি এটাকে ফেস-বুকড বলি।
উন্নত দেশ তথা ইউরোপ-আমেরিকার স্কুল-কলেজের আইন-কানুন যথেষ্ঠ উন্নত। সেখানে কড়া নিয়মের মধ্য দিয়ে শিক্ষাদান করা হয়। সেখানকার ছেলেমেয়েদের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের মতো দেশে যেখানে কিছু স্কুল-কলেজ বাদে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের নিয়মকানুন শিথিল, সেখানে ছেলেমেয়েদের আসক্তি কি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বা নিয়েছে তা একটু চোখ খুললেই দেখা যাবে। সবাই আমরা চোখ বন্ধ করে আছি, ওদিকে মহাপ্রলয় ঘটে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যেই আমরা দেখছি, আপত্তিকর সব বিষয় ফেসবুকে আপলোড, ছবি বিকৃতি, মেইল হ্যাকসহ নানান সাইবার অপরাধে জেল-জরিমানা, মারামারি, আহত করা এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে। সমাজের সকল মানুষ সচেতন হয়ে এর প্রতিকারের পথ বের না করলে সরকারের পক্ষেও কিছু করা কঠিন।
একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক টকশোতে আমি বিষয়টি নিয়ে প্রসঙ্গক্রমে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছিলাম। আমি অনুরোধ করেছিলাম স্কুল-কলেজের কোমলমতি ছাত্রদের বাঁচাতে শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু আইন করে হলেও এর একটি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। অনুষ্ঠান প্রচারের পর দেখলাম, ফেসবুকের আসক্তি ও এর নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আমার কথাগুলো এডিট করা হয়েছে। অর্থাৎ এখনও সময় হয়নি। ফেসবুক-নেটের এই আসক্তি বা প্রবণতা মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম। কিছু ছেলেদের জিজ্ঞেস করে জানা যায়, তাদের শিক্ষকদের মোবাইল ব্যবহারে কড়াকড়ি আছে। ফেসবুক-নেটের যুগ এখন, এটা অস্বীকার করা মূর্খতার শামিল।
কিন্তু শিশু-কিশোরদের জন্য তো প্রয়োজন এবং ব্যতিক্রম বাদে সারক্ষণ মোবাইল নিয়ে বসে থাকা একদম অনর্থক কাজ। আর অনর্থক কাজ থেকে সন্তানদের বিরত রাখার জন্য শিক্ষক এবং বাবা-মায়ের সম্মিলিত ভূমিকা রাখা দরকার। এখানেই ধর্মীয় আমলের কথা আসে। ব্যক্তি, সমাজের তথা দেশ বা জাতীর সফলতা আমরা সকলেই চাই। ব্যক্তি বা পারিবারিক সফলতা পাওয়ার জন্য বড় শর্ত, অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। বেশি করে নেক আমল তথা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। অত্যন্ত সুন্দরভাবে আল্লাহ তায়ালা তার কালামে পাকে বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র, যারা অর্থহীন বিষয় থেকে বিমূখ/বিরত থাকে।’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত ১-৩)
লেখক: কুরআন গবেষক