মাসউদুল কাদির
বিনয়ের আদর্শ হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বিনয়ের রূপকার বলা যায়, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবীকে। কারণ বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনয়ী হিসেবে তাকে গড়ে তুলেছিলেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। বিনয়াবনতাহীন মানুষ হিংস্র। এমন মানুষকে কেউই কাছে পেতে চায় না। নিজের করে নিতে পারে না। কোনো মানুষ তাকে ভালোবাসে না। তাকে মানুষ বিশ্বাস করে না। নবীকে তার সমকালীন সময়ে সবাই ভালোবাসতেন। তাকে বিশ্বাস করে আল-আমিন উপাধিকে ভূষিত করেছিলেন।
মানুষ সাধারণত নিজেকে ছোট করে উপস্থাপন করতে পারে না। নিজেকে বড় করে দেখাই হলো মানুষের জন্মগত অভ্যাস। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, আপনি আপনার বাহু মুমিনদের জন্য অবনমিত করুন। [সূরা হুজর : ৮৮।]
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র হলোÑ বিনয়াবনতা। কলুষমুক্ত আত্মাই বিনয়ের বাতিঘর। তাই বিনয়ীকে মহান আল্লাহ নিজের বিশেষ বান্দা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শান্তির আহ্বায়ক হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার সঙ্গীদের বিনয়াবনতা শিখিয়েছেন। প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আগত সব মানুষের উদ্দেশে নবীজি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি এই মর্মে বার্তা পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়াবনতা অবলম্বন করবে, কারো সামনে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করবে না এবং কারো ওপর সীমালঙ্ঘন করবে না। [সহিহ মুসলিম]
বিশ্ববাসীকে চরিত্রে, মানসিকতায়, আদর্শে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় মানুষে পরিণত করতে বিনয়াবনতা অনেক বড় সম্পদ। এ সম্পদ লাভের জন্য বান্দাকে প্রতিমুহূর্তেই প্রশিক্ষণে থাকতে হয়। কারণ মানুষ অহঙ্কারের কারণেই নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট ভাবতে পারে না। অন্যকে প্রাধান্য দিতে পারে না। অহঙ্কারের আগুনে পুড়তে থাকে। সে সঙ্গে সমাজ, রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ জন্যই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনয়ীকে সম্মানী ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, কেউ যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিনয়াবলম্বন করে তবে আল্লাহ তায়ালা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। [সহিহ মুসলিম]
বিনয়ী মানুষই প্রকৃত সম্মানী মানুষ। প্রবাদে আছে, অহঙ্কার পতনের মূল। অহঙ্কার মানুষকে পথে নামিয়ে ছাড়ে। অহঙ্কারের কারণেই মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব হয়, দেশে যুদ্ধ হয়, হয় খুনোখুনি। তাই নবীজির শিক্ষা হলো, অহঙ্কারমুক্ত জীবনগঠন করতে হবে। বিনয়ী হতে হবে। এতেই নিহিত রয়েছে মানবতার মুক্তি।
লেখক : প্রিন্সিপাল, ইকরা বাংলাদেশ হবিগঞ্জ।