যুক্তরাষ্ট্রে আটক ৮৬ বাংলাদেশি ফেরৎ আসছে
ডেস্ক রিপোর্ট: অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ৮৬ জন বাংলাদেশিকে ফেরৎ পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় দুই বছর ধরে দেশটির বিভিন্ন কারাগারে এসব বাংলাদেশি বন্দি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) দফতর সূত্রে জানা যায়, আটককৃতরা সবাই অবৈধভাবে প্রবেশ করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। তারা নিজেদের বিরোধী দল তথা বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থক দাবি করে বলেছিলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের নির্যাতনের শিকার, জেল-জুলুম ও প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু এ দাবির সমর্থনে তারা যথাযথ কাগজপত্র বা প্রমাণ দিতে পারেননি।
অনুপ্রবেশ, জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরের এপ্রিল ও জুলাই মাসে দুই দফায় ৬৮ জন বাংলাদেশিকে ফেরৎ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর সরকার ও একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মধ্যস্থতায় বিশেষ বিমানে করে তাদের দেশে পাঠানো হয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ছিলেন। দেশে ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে তারা জানিয়েছিলেন, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য আদম ব্যবসায়ীদের মাথাপিছু ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন।
বর্তমানে যে ৮৬ জনকে ফেরৎ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের মধ্যে ৪৬ জনের একটি তালিকা বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর নিশ্চিত হতে চাচ্ছে, এসব ব্যক্তি বাংলাদেশি কি-না। কারণ, তারা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেও নাগরিকত্ব সম্পর্কিত সঠিক কাগজপত্র দাখিল করতে পারেননি। তারা অভিবাসন আদালতকে জানিয়েছেন, দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার সময় পাসপোর্ট খোয়া গেছে অথবা মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময়ই দালালরা তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৮৬ বাংলাদেশিকে ফেরৎ পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। ওই চিঠিতে চার্টার্ড বিমানে করে দুই দফায় ৮৬ বাংলাদেশিকে ফেরৎ পাঠানোর বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের চূড়ান্ত আদেশ জারি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ তালিকা উপযুক্ত নথিপত্রসহ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে জমা দিয়েছে।
বহিষ্কারের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন- হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ উদ্দিন, মো. আলম, সোহরাব হোসেন, মো. মোহসীন, বাচ্চু মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, মোজাম্মেল হোসেন, গাজী কবির, আহম্মদ রুমন, আবুল কাশেম, মো. রহমান, এনামুল ইসলাম, মো. শিপন আহম্মেদ চৌধুরী, আবু বক্কর, মো. আজিজুর রহমান, রিপেন নজরুল, জাহিদুর রহমান, সাবুল হাসাইন, সৌরভ দেব, বিবেক কান্তি দাস, আব্দুল মাসুদ, সাব্বির আহমেদ, জয়নাল আবেদীন, মামুন আলম, মোহাম্মদ শাহাদত, হেলাল উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, মনিরুল মুন্না, বি. হুসাইন, মো. আরাফাত, তাজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন, সামসুদ্দিন, আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ ইসলাম, আকতার হুসেইন, শাহীন আহম্মেদ, নাসির উদ্দিন, ফারুক আহমদ, মোহাম্মদ রহিম, মোহাম্মদ সোহেল, আহমদ শেখ, শিব্বির আহমদ, আব্দুর রহমান, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মোহাম্মদ ইসলাম, মো. ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম, জাহেদ আহমদ, আবু সাঈদ, মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাসান মোহাম্মদ, শরিফুল হাসান, মো. ওহিদুর রহমান, মোহাম্মদ উদ্দিন, এনায়েত করিম, রিপন সর্দার, ফয়েজ মোল্লাহ, আব্দুস সামাদ, বশির বাবু, মোহাম্মদ হুদা, মোহাম্মদ রহমান, মাইনুল ইসলাম, অহিদুল ইসলাম, সুলতানুল আরফিন, মিনহাজুর রহমান, হুমায়ুন কবির, নাসের এম ডাবু, আব্দুল রহমান, মোহাম্মদ ইসলাম, মামুনুর রশীদ, রুহুল আমিন, কালু চৌধুরী, নূরল আলম, শরীফ উল্লাহ, মালিক খসরু, আকরাম হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আল আমিন, অসীম চন্দ্র দাস, আসাদুল সিদ্দিকী, মিল্টন রোজারিও, ইকবাল হোসেন ও মো. শফিকুল আলম।
এ তালিকায় উল্লিখিত অধিকাংশেরই দেশের বাড়ি সিলেট ও নোয়াখালী অঞ্চলে বলে জানা গেছে। তবে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তাদের ঠিকানার সত্যতা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। সম্পাদনা : রিকু আমির