বখাটেরা বেপরোয়া, রাজধানীসহ সারাদেশে উৎপাতে অতিষ্ঠ ছাত্রীরা
আজাদ হোসেন সুমন: আবারো বখাটেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনাও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঘটছে এ উৎপাতের ঘটনা। কোথাও অব্যাহত উৎপীড়নে অতিষ্ঠ ছাত্রী আতœহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, আবার কোথাও বখাটেদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে অথবা লাঞ্ছিত ও আহত হয়ে চরম এক গ্লানি ও বিপর্যয়কর জীবন কাটাতে হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নিতু, রিসা, তাহমিনা ও খাদিজার পর এবার মিরপুরে প্রকাশ্যে ২ বোনকে পিটিয়ে আহত করার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে বখাটে নামধারী সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা হয়। যদিও মামলাগুলো তদারকির দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে মানবাধিকার সংস্থা বলছে, যাদের আটক করা হয়, তাদের বিচারে বিলম্ব হওয়ার সুযোগ নিয়ে নানা সামাজিক সমঝোতা করা হয়। ফলে শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার স্কুলছাত্রী কণিকা রানী ঘোষকে গত ২৭ মে মহিপুর
ডিগ্রি কলেজের পাশের সড়কে বখাটে আব্দুল মালেক উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনায় তারিন আফরোজ, মরিয়ম ও তানজিমা নামে আরও ৩ স্কুলছাত্রী আহত হয়। ২৪ আগস্ট বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলস্থ উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে ওবায়দুল খান নামের বখাটে যুবক ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সুরাইয়া আক্তার রিসাকে। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নিতু ম-লকে (১৪) বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ৩ অক্টোবর বখাটে বদরুলের উপর্যুপরি চাপাতির কোপে কলেজছাত্রী নারগিস ওরফে খাদিজা ঢাকার একটি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। ১৮ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে এক বখাটের প্রেম নিবেদনে সাড়া না দেওয়ায় তাহমিনা আক্তার (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম করা হয়েছে। ওই কিশোরীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ১৯ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরে বিসিআইসি কলেজের দুই ছাত্রীকে (জমজ বোন) বুধবার পিটিয়ে আহত করেছে বখাটেরা। তাদের হামলায় একবোনের পা ভেঙে গেছে। কলেজ ছুটির পর ওই দুবোন বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় কলেজের কাছেই বখাটেরা তাদের উত্ত্যক্ত করে। এর প্রতিবাদ করায় তারা দুই বোনকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটায়। শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশে আবারও বেড়ে গেছে বখাটেদের উৎপাত। একের পর এক ঘটছে উদ্বেগজনক ঘটনা। অন্যদিকে বখাটেদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠা, মূলত বিচারহীনতাকেই এ প্রবণতার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন সমাজ গবেষকরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার বস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, সমাজে যেকোনো ধরনের অসঙ্গতি বাড়লে এ ধরনের ঘটনার প্রবণতা বেড়ে যায়। যখন বেকারত্ব-বিচারহীনতা বাড়ে- হতাশা থেকে অবক্ষয় ও উচ্ছৃঙ্খলতা বাড়ে। আইন প্রয়োগের পাশপাশি জ্ঞানী, গুণী সমাজের সচেতন অংশকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। জনসচেতনামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ হ্রাস করা সম্ভব। অপরাধ বিশ্লেষক ও সাবেক আইজিপি মোদাব্বির চৌধুরী বলেন, শুধু আসামি গ্রেফতার করলেই হবে না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে। অপরাধীর দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমবে। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু