আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান একটি অক্ষয় সংগঠন হিসেবে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থান করে নিয়েছে
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সম্মেলনে আমরা নতুন নেতৃত্ব পেয়েছি। নবীন ও প্রবীণ নেতৃত্বের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। জন্ম থেকেই আওয়ামী লীগকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরুতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় দলটিকে দ্বিধাবিভক্ত, ভাগ করার চেষ্টা হয়েছিল, রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ঠিকই নিজের মতো করে রাজনীতিতে একটা জায়গা করে নিয়েছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একটি অক্ষয় সংগঠন হিসেবে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থান করে নিয়েছেÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। বিভিন্ন সময় বহু ¯্রােত এসে আওয়ামী লীগে মিশেছে। তবে আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, শাশ্বত্ব বাঙালির যে ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারণ করে এগিয়েছে। কিছু কিছু বিচ্যুতি আমরা দেখেছি, বিভিন্ন ধরনের ঝাঁপটা এসেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মৌলিক অবস্থান থেকে সরে যায়নি।
জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যে সভা হয়ে গেল সেখানেও আলোচিত বিষয় ছিল নেতৃত্ব। কারা নেতৃত্বে আসতে পারবে এ বিষয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর কোনো সদস্যই যেন দলে আসতে না পারে। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বে এরকম কেউ আসতে পারা এত সোজা নয়। এরশাদের জাতীয় পার্টি ও বিএনপির বেলায় ঘটেছিল এমনটি। দলছুট, অতি ডান, অতি বাম, বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতালোভী, সামরিক, আমলাতন্ত্র, বেসামরিক আমলাতন্ত্র, স্বাধীনতাবিরোধী, প্রগতিবিরোধী যত রাজনৈতিক দল ছিল সব এক জায়গায় এসে ভীড় করেছিল।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আমলেÑ বাংলাদেশের স্বাধিকার, স্বায়ত্বশাসন, ছয় দফার প্রস্তাবগুলো ষাটের দশকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সম্মেলনের মাধ্যমে এসেছে। আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা যখন এলো তখন অনেকেই বললেন তা হঠাৎ করেই এসেছে। রাষ্ট্র যে ধর্মনিরপেক্ষ হবে তা তো ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে যখন আওয়ামী লীগ হয়ে গেল তখনই তা বাস্তবতা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের সামনে যে সংকট বা সমস্যা আসতে পারে তা মোকাবেলা করার জন্য যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন থেকে সেই দিকনির্দেশনামূলক ঘোষণা আসবে বলে আমি মনে করি। আওয়ামী লীগের যে নেতৃত্ব রয়েছে তাদের অনেক সফলতা রয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা লাভ আওয়ামী লীগের রাজনীতিরই ফসল। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এর চেয়ে বড় ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগের অর্জনের এই জায়গাটি কেউ কোনোদিন নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা তো ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারা আসতে পারতেন তাদের ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা, বিভক্ত করা, বিভিন্ন রকম অপবাদ জনবিচ্ছিন্ন করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্রটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছিলাম, তার পুরোটাই হাতছাড়া হয়ে যায় ’৭৫-এর পনের আগস্ট। কারণ সেদিন শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বা জাতির জনককেই হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশের অস্থিত্বকে অর্থ্যাৎ বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তর করা হয়। যে আদর্শ, স্বপ্ন নিয়ে মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছে, ঐতিহাসিকভাবে যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে এসেছিল ষাটের দশক থেকে, সকল অপশক্তি ক্ষমতা দখল করে পনের আগস্টের পর। সেখান থেকে আওয়ামী লীগকে দেশ ও জনকল্যাণের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা অনন্য। আওয়ামী লীগকে নতুন প্রজন্মের আধুনিক একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে রূপান্তরের ক্ষেত্রেও তার বিরাট অবদান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনকে কোনোভাবে ক্রটিমুক্ত বলা যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যদি একটি নির্বাচন হতো তাহলে যতবেশি গ্রহণযোগ্য হতো তা হয়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যে সবার অংশগ্রহণ ছিল না সেটা একটা পরিস্থিতি। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি শুধু নির্বাচন বয়কটই করেনি, নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য বহু মানুষের প্রাণহানি, ভোটকেন্দ্র জ¦ালিয়ে, স্কুলঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়েই এই সরকার। এটা ছিল একরকম বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যে হলো না তার জন্য আওয়ামী লীগের কতটুকু দায় তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দায় বিএনপিরই সবচেয়ে বেশি।
ড. মীজানুর রহমান বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার শেখ হাসিনা সরকারই করেছে। শেখ হাসিনার সাহসিকতার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বব্যাংক তুচ্ছ একটা অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করে চলে গিয়েছিল। তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করছি আমরা। এই যে অসীম সাহস, নিজের পায়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়তা, সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার প্রেরণাটা তো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই যুগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের। বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে, বিশ্বসমাজে আলোকিত হচ্ছে আপনার-আমার আমাদের সকলের প্রিয় বাংলাদেশ।