ভোলায় ঐতিহ্যবাহী কবিগানের আসর
অচিন্ত্য মজুমদার, ভোলা : ভোলায় সদর উপজেলার বাপ্তা গ্রামে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কবিগানের আসর শুরু হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীর আয়োজনে রতন মহাজন বাড়ির উঠানে শুক্রবার থেকে ২ দিনব্যাপী এ গানের আসর শুরু হয়। এক সময়ের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কবি, জারি, সারি, আর পালাগানের মাঝে বাঙালি তার প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেত। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে এ সব জনপ্রিয় গান। তাই বাঙালীর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ভোলায় আজও আয়োজন করা হচ্ছে কবিগানের আসর।
কবিগান আয়োজক কমিটি সভাপতি মনরঞ্জন দে জানান, শুক্রবার সকাল থেকে পাল্টাপাল্টি যুক্তি, তর্ক আর গানে-গানে দুই কবিয়ালের লড়াইয়ে মধ্যে দিয়ে কবিগান শুরু হয়। যা হারমনিয়াম, ঢোল, বাশি, কাশা, বেহালাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। দূর-দুরান্ত থেকে আসা শত-শত দর্শক শ্রোতা এ গান উপভোগ করেন। এবারের আসরে পালা গান পরিবেশন করছেন গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ার কবিয়াল শরৎ সরকার ও টুঙ্গিপাড়ার গৌতম সরকার।
এ গানের আসরকে কেন্দ্র করে খাওয়াদাওয়া পাশাপাশি, বসে গ্রামীণ মেলা। আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে লক্ষীপূজার পর স্থানীয় গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে এ কবিগানের আয়োজন করেন। তাদের আয়োজন করা কবিগানের মাধ্যমে বাঙালীর লোক সাংস্কৃতি বিকাশ ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কবিগান অনুষ্ঠানে আসা প্রবীন শ্রোতা দিনবন্ধু মাস্টার বলেন, একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদে আসর বসতো কবি জারি, সারি আর পালাগানের। শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হতো এসব গ্রামীণ গানের। কিন্তু বর্তমান আকাশ সংস্কৃতি আর আধুনিক বিনোদনের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে এ সব জনপ্রিয় গান। বর্তমান প্রজন্ম এর সাথে পরিচিত না থাকলেও প্রবীনরা আজও খুঁজে ফেরে এক সময়ের এসব গানের আসর। তাই কবিগান শোনার পাশাপাশি নিজেদের সাংস্কৃতির সাথে বর্তমান প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দেয়ার সুযোগও পাচ্ছেন তারা।
গোপালগঞ্জ কোটালিপাড়ার থেকে আসা কবিয়াল শরৎ সরকার জানান, তিনি ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ভোলার বাপ্তা গ্রামের মহাজন বাড়ি কবিগান করে আসছে। বাংলার লোক সাংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখাতে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই কবিগান পরিবেশন করেন।
বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা জানান, আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে এই কবিগানের আসর হয়ে আসছে। শুধু জেলার নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত-শত মানুষ বাপ্তা ইউনিয়নের মহাজনবাড়ি কবিগান শুনতে আসেন। সম্পাদনা : তারেক