ফিরে দেখা আ.লীগের বিগত ১৯টি সম্মেলন
মাহমুদুল আলম : আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে আগের প্রতিটি সম্মেলনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশ বা দলটি নিজের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এরমধ্যে কোনো কোনোটি দেশের ইতিহাসের গতিধারাও পাল্টে দিয়েছে। তবে ক্ষমতায় থাকার চেয়ে বিরোধী দলে থাকার সময়ই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এসেছে নতুন গতিধারা।
১৯৫৩ সালে রোজ গার্ডেনের এক কর্মী সম্মেলনের পর ওই বছর আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে সভাপতি হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। পরের সম্মেলন ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে। ওই কাউন্সিলের বিশেষত্ব ছিল সেবারই দলকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ রাখা হয়।
১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইলের কাগমারীতে দলটির পরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে ঢাকার হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে খাজা নাজিমুদ্দিনপন্থি মুসলিম লীগনেতা শাহ আজিজুর রহমান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সভাপতি পদে আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছয় দফা আন্দোলন। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা অনুমোদন হয়। এ সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের শেষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৪ জুন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় ও এর রায় মেনে নিতে পাকিস্তানি শাসকচক্রের অসম্মতি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল। এই সম্মেলনে সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ৬ দফা ও ১১ দফার বাস্তবায়নের জন্য এ নির্বাচনকে একটি গণভোট হিসেবে গ্রহণ করতে আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। বাংলাদেশে শাসক দল আওয়ামী লীগের এর পরের সম্মেলন হয় ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। এ সম্মেলনে একটি সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা দলের পদে থাকতে পারবেন না। ফলে বঙ্গবন্ধু দলীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দলের সভাপতি হন এএইচএম কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
এরপরই আসে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ রাত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিহত হন সপরিবারে। সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর কারাগারের ভেতরে নিহত হন আওয়ামী লীগের চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামরুজ্জামান ও এম মনসুর আলী। জাতির এ বেদনা দলটির ইতিহাসেও সবচেয়ে বড় দুঃসময় এনে হাজির করে। এ ঘটনার দুবছরের মধ্যে ১৯৭৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় সম্মেলন। সেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বদলে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে ৪৪ সদস্যের সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়।
পরের বছর ১৯৭৮-এর এপ্রিলে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আবদুল মালেক উকিলকে সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও চার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ছাড়া আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ ও দলকে আরও শক্তিশালী করতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে।
ছয় বছর পর ১৯৮৭ সালের ১ থেকে ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের চতুর্দশ সম্মেলন। এ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও সাজেদা চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ধারা থেকে বের হয়ে ১৯৯২ সালে দলটির সম্মেলনে নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালার আলোকে দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের সংশোধনী আনা হয় ওই কাউন্সিলে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালের মে মাসে। এরপর ২০০২ সালের সম্মেলনেও শেখ হাসিনা সভাপতি থাকেন। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে জিল্লুর রহমানের জায়গায় আসেন আবদুল জলিল। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের শাসনের পর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের অষ্টাদশ সম্মেলনে সভাপতির পদে কোনো পরিবর্তন না এলেও সাধারণ সম্পাদক পদে আসেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিন বছর পর ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের উনিশতম সম্মেলনে (গত সম্মেলন) গঠনতন্ত্রে কোনো সংশোধন আনা হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদও ছিল অপরিবর্তিত। সম্পাদনা : আলাউদ্দিন