আল জাজিরায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গার্মেন্ট শিল্পের দুর্দশা প্রদর্শিত
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
পণ্যের অর্ডারে হাত বদল প্রক্রিয়ায় কী করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা ‘ওয়ালমার্ট’ এবং অপর পোশাক বিক্রেতা ‘গ্যাপ’-এর ‘ওল্ড নেভি’ বাংলাদেশের নানা শহরের ঘিঞ্জি আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠা ‘পাথর চাপা’ মূল্যের গার্মেন্ট কিনে লাভবান হচ্ছে, তারই উপর নির্মিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ: বিহাইন্ড দ্য ফ্যাক্টরি ফায়ার’ নামের প্রামাণ্যচিত্রটি কাতারের দোহাভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশন পর্যায়ক্রমে প্রদর্শন করছে। গত ১৭ অক্টোবর থেকে তা সম্প্রচারিত হচ্ছে এবং সেটি তাদের ওয়েবসাইটে ‘রিওয়াইন্ড’ প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এতে শুধু যে ‘ওয়ালমার্ট’ ও ‘ওল্ড নেভি’র বাণিজ্যিক লাভের বিষয়টি স্থান পেয়েছে তাই নয়, বরং রানা প্লাজা ধসে সহস্র্রাধিক প্রাণহানি এবং তাজরিন গার্মেন্টের অগ্নিকা-ে এক প্রকার বন্দিদশায় শতাধিক জীবন ভস্মীভূত হবার করুণ চিত্রটি বিধৃত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার-পরিজনের অনেকেই যে আর্থিক কোনো সুফল পাননি, তারও সরেজমিন সাক্ষাৎকার রয়েছে। পাশাপাশি ‘ওয়ালমার্ট’ শিশুশ্রমে তৈরি গার্মেন্ট পণ্যের বাণিজ্য করে, সেই প্রমাণটিও রয়েছে। একই সঙ্গে সোচ্চার নারী, শ্রম ও মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্যও স্থান পেয়েছে। আল জাজিরার ‘রিওয়াইন্ড’ ওয়েবপেজের দাবি- এ ধরনের পুরস্কারজয়ী প্রামাণ্যচিত্রগুলোর কোনো কোনোটি ১০ বছর আগে ধারণ করা হলেও বাস্তবে এখনও ঘটনাগুলো তথৈবচ; এমনকি পরিস্থিতিরও কোনো উত্তরণ ঘটেনি।
সে জন্য ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ প্রামাণ্যচিত্রের সূচনায় ‘ওয়ালমার্ট’-এর দম্ভোক্তিগুলো নিদারুণ চোখে আঙ্গুল দিয়ে বিদীর্র্ণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- ২০১২ সালটি ওয়ালমার্টের জন্য বাণিজ্য সফল বছর হলেও বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের জন্য তা ছিল মর্মন্তুদ বছর; এখনও সেই মর্মন্তুদ বছরের কান্না বিদূরিত হয়নি। যে মাতা তার কন্যাকে অতি ¯েœহে লালন করেছেন, তাকে দাফন করার ক্ষেত্রেও খুঁজে পাননি। প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে- কে সে জন্য দায়ী? একই সঙ্গে তাতে ওয়ালমার্টের দায় এড়ানোর ক্ষেত্রে ‘সাব কন্ট্রাক্ট’-এর মতো সুদীর্ঘ হাত বদলের ‘থার্ড পার্টি অর্ডার’-এর সুকৌশল ব্যুহটি চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়েছে।
ভাবনার বিষয়টি হচ্ছে- আল জাজিরার এই প্রামাণ্যচিত্রটির প্রতিক্রিয়ায় ‘ওয়ালমার্ট’ ও ‘ওল্ড নেভি’র বাংলাদেশে মাথাপিছু মাসিক ৩২ ডলারে শ্রমশোষণের ক্ষেত্রে ধিক্কার জাগালেও দেশটির সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট রপ্তানি ক্রমান্বয়ে অন্যত্র চলে যাবে না তো?
ই-মেইল: নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স