আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যা থাকবে
বিশেষ প্রতিনিধি: সব প্রস্তুতি শেষ। শুরু হচ্ছে আজ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন।
জানা গেছে, দ্ইু দিনের এ সম্মেলন চার অধিবেশনে সাজানো হয়েছে। সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সেøাগান হচ্ছে, ‘ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার। এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’। সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ৬ হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নেবেন। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন ২৩ অক্টোবর রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে। এসময় কমিটি নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এ নির্বাচন কমিশন। তিন সদস্যের এ কমিশনের সদস্যরা হলেন: অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রশিদুল আলম।
উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
অন্যদিকে ১২টি দেশের ৫৫ জন অতিথি এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-িস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ডেলিগেট কার্ড, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিফর্মসহ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরির কাজও শেষ। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রও প্রস্তুত হয়েছে।
সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা শহরগুলো সাজানো হয়েছে। শুধু দেশেরই নয়, প্রবাসী বাঙালিদেরও দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে। অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে নির্বিঘœ করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, সম্মেলন স্থলে চোখ ধাঁধাঁনো আলোকসজ্জার ব্যবস্থাসহ নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারসহ অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে উদ্যানটি। নৌকার আঙ্গিকে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলনের মূল মঞ্চ। এর আগে সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীসহ বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের ওপরে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব তোরণগুলোয় বিএনপি-জামায়াতের আগুনসন্ত্রাসের বিভিন্ন আলোক চিত্র সাঁটানো হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গিবাদের পক্ষ অবলম্বন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য সন্নিবেশিত থাকবে লিফলেট, ব্যানার ও পোস্টারে।
সাজ-সজ্জা উপ-কমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন হবে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ। এর মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং গৌরব বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হবে। ঢাকা শহরসহ সারা দেশে আলোকসজ্জা করা হয়েছ। সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এসব সাজ-সজ্জায়।
সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিদের হাতে দেওয়া হবে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের ভিডিও সিডি। সেখানে জঙ্গিবাদের পক্ষে দেওয়া তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হবে।
ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে : রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাজ-সজ্জার সাথে সাথে ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতেও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের ছাপ পড়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন সামস বলেন, ২০তম জাতীয় কাউন্সিল আওয়ামী লীগের নিজস্ব ফেসবুক পেজে থেকে সরাসরি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করা হবে। ফেসবুকে সম্মেলন সরাসরি দেখতে এ লিংকে ক্লিক করতে হবে যঃঃঢ়ং:/িি/.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/বাবহঃং/১৯০৫৯১২৫৪৬৮৩৪৩২/ সম্মেলনে ৫০ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট বসার ব্যবস্থা থাকবে। তাদের সুবিধার্থে ১০টি বড় পর্দায় সম্মেলন দেখানো হবে।
এছাড়াও অনলাইনে অংশগ্রহণ এবং সমর্থন জানানোর জন্য্য যঃঃঢ়://নধফমব.ধষনফ.ড়ৎম লিংক-এ গেলে ফেসবুক ফটোতে ব্যাজটি সংযুক্ত করা যাবে। এরপর সেই ফটোকে করা যাবে প্রোফাইল পিকচার ।
১২ দেশের ৫৫জন অতিথি আসছেন : চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, কানাডা, অস্টোলিয়া, ইতালি, শ্রীলংকাসহ ১২টি দেশের ৫৫ জন বিদেশি অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতা, কাউন্সিলর, প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি অতিথি ও শুভানুধ্যায়ী মিলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ হবে বলে প্রত্যাশা আয়োজকদের। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭টি প্রবেশপথ করা হয়েছে। এছাড়া থাকছে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
১৫০/৮৪ ফুট সুবিশাল মঞ্চ তৈরি : সম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে। লম্বায় ১৫০ ফুট, চওড়ায় ৮৪ ফুট। মঞ্চের ছাদের উচ্চতা ৪২ ফুট। নির্মাণকাজে যুক্ত কর্মীরা জানান, মূল মঞ্চ হয়েছে পাঁচ স্তরের। একেবারে সামনের অংশটির উচ্চতা হবে আড়াই ফুট। যেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে। সাত ফুট উচ্চতার স্থানটিতে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বসবেন। আর পেছনের বিভিন্ন উচ্চতার তিন সারিতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৫৮ জনের বসার স্থান করা হয়েছে।
মঞ্চের সামনে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। এর ভেতরে ২০ হাজার চেয়ার রাখা হয়েছে। রয়েছে ১৬টি এলইডি টেলিভিশন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক কারিগর মঞ্চ তৈরির কাজ করেছেন। চারুকলার প্রায় দেড় ডজন ছাত্র সুদৃশ্য এই মঞ্চ নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এখন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বয়স ৬৭ বছর। এ পর্যন্ত দলটির ১৯টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনর্র্নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
আজ ১০টায় সম্মেলন কেন্দ্রে পৌঁছবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেয়ার পরেই সকল ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে শুরু হবে সম্মেলনের মূল কার্যক্রম। দলের থিম সংয়ের সঙ্গে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
গত সম্মেলনের পর থেকে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সকল আন্দোলন সংগ্রামে নিহত দলীয় নেতা ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করবেন আব্দুল মান্নান খান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম। এরপর বক্তব্য দেবেন সম্মেলনে আগত বিদেশি অতিথিরা। বিদেশি অতিথিদের বক্তব্য পর্বে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিরা বক্তব্য দেবেন। পরে দলীয় সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে এই পর্বের সমাপ্তি হবে।
সভাপতির বক্তব্যের পর বিগত সম্মেলন থেকে এ পর্যন্ত দলের বিভিন্ন কার্যক্রমের উপর করা প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ প্রতিবেদনকে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট বলা হয়ে থাকে।
সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপনের পর মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতিতে আমন্ত্রিত অতিথিসহ সম্মেলন স্থলে উপস্থিতদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দলের নেতারা বক্তব্য দেবেন। জেলার নেতাদের বক্তব্যের শেষে সন্ধ্যায় বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে সাজানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রোববার সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে চলমান কমিটি বিলুপ্ত করা হবে।
সম্মেলনের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন ৬৭৫০ কাউন্সিলরের ভোটে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ড. মসিউর রহমান ও রাশেদ উল আলম।
এরই মধ্যে কাউন্সিলরদেরকে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি দেয়া হবে। খাবারের পর বিকালে আগামী তিন বছরের জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর নির্বাচিত সভাপতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দেবেন। এর মাধ্যমেই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।