হুমায়ুন আইয়ুব : যে বাগানে ফুল নেই, যে নদীর ঢেউ নেই, যে বসন্তে কোকিলের গান নেই, সেই শুষ্ক বাগান, মরা গাঙ আর অবেলার বসন্ত আমাদের মনে দোল দেয় না। এমন বাগান-নদী-বসন্ত কাছে টানে না। আমাদের হৃদয় পড়ে থাকে ফুলে ফুলে, পথে প্রান্তরে । বনবাদার আর নদীর ঢেউয়ে। পাখির সুর, ভ্রমরের গুণগুণ, শিশিরের জল, অবারিত জ্যোছনা আমাদের পুলকিত করে। জীবন সংসারে সন্তানই ফুল। শিশুরা পাখি। ওদের কান্নাই নদীর ঢেউ। ভ্রমরের গান। শিশুর আদর-সোহাগে আছে জ্যোছনার আকুলতা ও তারার বেদনা। সন্তানের নরম গালে চুমুর আলপনা পৃথিবীর সব সুখ-শান্তি ও বেদনা কাব্যের চিত্রকল্প। সন্তান স্বর্গের উপমা। জান্নাতের প্রজাপতি। সন্তানের প্রতি মোহাচ্ছন্ন ভালবাসা, হৃদয় নিংড়ানো আলতো আদরও ইবাদত জানে ইসলাম। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ধন ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের অলংকার-শোভা। সুরা কাহাফ : ৪৬
কুরআন আরও বলছে, নভোম-ল ও ভূম-লের রাজত্ব আল্লাহ তায়ালারই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান ও যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল। সুরা শুরা : ৪৯-৫০
জীবন গাঙে ভরা বর্ষার পূর্ণতা দেয় সন্তান। পরস্পরের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও ভালবাসার মোহনা এ আদরেরা। কুরআন আমাদের শিখিয়েছে সন্তানের আকুলতা। প্রভুর কাছে সন্তানের আবেদন। হে আমাদের রব, আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের জন্য চোখের শীতলতা বানিয়ে দাও এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। সুরা ফুরকান : ৭৪
আরও বর্ণিত হয়েছে, হজরত জাকারিয়া আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। সুরা আল-ইমরান : ৩৮
ইসলামের মহান নবী ও মানবতার পতাকাবাহী হজরত মুহাম্মাদ সা. শিশুদের জান্নাতের প্রজাপতি বলে উপমা দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা সূত্রে বর্ণিত মহানবী সা. বলেন, তোমাদের শিশুরা জান্নাতের প্রজাপতি। ইমাম বুখারি, আল আদাব আল মুফরাদাত।
নবীজি আরও বলেছেন, তোমরা শিশুদের ভালবাস ও তাদের প্রতি দয়া করো। তাদের সঙ্গে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে পূর্ণ করো। তাদের কল্যাণে তোমারা রিজিক পেয়ে থাকো বলে জেনে রাখো। বুখারি মুসলিম
সন্তানের হাসিতে আলোকিত হোক আমাদের ভোর। রাতের নরম আলোয় জ্বলজ্বল করুক আমার কন্যার দাঁত। জীবন সংসারে ছড়িয়ে পড়–ক ছেলের দুত্যিময় হাসি।
পশ্চিমা প্রীতি যেন আমাদের পেয়ে না বসে। আমাদের পবিত্র কোলে যেন জায়গা করে না নেয় কুকুর-বিড়াল। পশ্চিমারা কুকুরের বিয়ে দেয়, নিজে সাজে কুমারী মাতা। থাকার ঘরে বাস করে কুকুর, শিশু কাঁদে ডে-কেয়ারে। অভাগা জননী রাজপথে অধিকারের লড়াই করে, স্বাধীনতার আর্তচিৎকার করে, তার সন্তানই জন্মের ভোর থেকে আদর-সোহাগ পাওয়ার অধিকার হারিয়ে গুমরে কাঁদে। কুকর বিড়াল নয়; সন্তানই আলোকিত করুক সংসার। জীবন। শিশুর হাসিতে সুগন্ধময় হোক ঘর। সম্পাদনা : রিকু আমির