থমকে আছে ২২ ইউলুপ নির্মাণের কাজ
ফয়সাল খান: যানজট নিরসনে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ছোট বড় ৬৯টি ক্রসিং বন্ধ করে ২২টি ইউলুপ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। মেয়র আনিসুল হকের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি শুরু করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুর থেকে রাজধানীর হাতিরঝিল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়াই পরিকল্পিত উপায়ে গাড়ি পারাপারের জন্য ‘ইউ’ আকৃতির এসব উড়াল সেতু বা ইউলুপ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর জন্য ডিএনসিসি এলাকায় ১২টি এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) এলাকায় ১০টি স্থান চিহ্নিত করা হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাদের ছাড়পত্র ও মতামত পাওয়ার পর ডিপিপি অনুমোদিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তবে কবে কাজ শুরু হবে, তা বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
জানা যায়, রাজধানীর সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় যাত্রী চলাচল নির্বিঘœ করা ও রাজধানীর চলমান যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকারের এসব প্রকল্পের সাথে ইউলুপ প্রকল্পটি সাংঘর্ষিক হবে কি না তা খতিয়ে দেখছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য প্রাথমিকভাবে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ডিএনসিসি। কিন্তু হাতিরঝিল থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ডিএনসিসির সীমানায় থাকলেও আবদুল্লাহপুর ব্রিজের ওপার থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সীমানা অবস্থিত। প্রকল্পটি ২ সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক পৃথক ডিপিপি জমা দিতে বলা হয়। এরপর নির্দেশনা অনুযাযী ২ সিটি কর্পোরেশন আলাদা দুটি প্রস্তাবনা জমা দেয়।
সূত্র জানায়, মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ডিপিপি তৈরি করা হলেও ডিএনসিসির নিজস্ব জমি নেই বললেই চলে। প্রকল্পে ইউলুপ নির্মাণের জন্য যেসব স্থানের জমির কথা বলা হয়েছে সেগুলোর প্রায় সবই অধিকাংশই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার। নাগরিকদের সুবিধার্থে ইউলুপ তৈরির জন্য জমি প্রয়োজন। তাই এসব জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুই ধরনের ইউলুপ নকশা করা হয়েছে। একটিতে ছোট-বড় দুই ধরনের যানবাহনই চলবে। অন্যটিতে শুধু ছোট গাড়ি চলবে। একটি ইউলুপ থেকে আরেকটি ইউলুপের সর্বনিম্ন দূরত্ব হবে ৮০০ মিটার আর সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার। এসব ইউলুপ দিয়ে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারবে। ফলে তখন বিভিন্ন মোড়ে কোনো ট্রাফিক পুলিশেরও প্রয়োজন হবে না। এতে রাজধানীর যানজট প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কমে যাবে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ইউলুপগুলো নির্মাণ করতে ৩৭.০৯ বিঘা জমির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১.২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১.৬১ বিঘা ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের ১.৮৩ বিঘা জমি রয়েছে। এসব জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব জমি খালি আছে, কোনো অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না জানায় সূত্রটি।
উল্লেখ্য, ইউলুপ নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করতে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড় থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে মেয়র জানান, যানজট নিরসনে প্রাথমিকভাবে বনানী-কাকলী, এয়ারপোর্ট, উত্তরার জসীমউদ্দীন ও আবদুল্লাহপুরের ট্রাফিক মোড়ে চারটি ইউলুপ নির্মাণ করার প্রকল্প নিয়েছে ডিএনসিসি। পরে ঐ বছরের ২৮ নভেম্বর ইউলুপ নির্মাণ বিষয়ক সভায় ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজীপুর থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ট্রাফিক সিগন্যালমুক্ত করতে ২২টি ‘ইউ’ আকৃতির গাড়ি পারাপারের সেতু বা ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৬৯টি ক্রসিং বন্ধ করে এসব ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন