উন্নয়নের বিকল্প নেই, প্রাণ পুড়িয়ে উন্নয়ন চাই!
ফিরোজ আহমেদ
একটা বিষয় দেখে ভালো লাগল, অনেক মোসাহেব চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে মোসাহেব হিসেবে ‘শহিদ’ হয়েছেন, অর্থাৎ লোকলজ্জার ভয়ে চুপ মেরেছেন। তবে সবার চক্ষুলজ্জা সমান হবে, এই আশা বাতুলতা। কয়েকজন ‘গাজি’ মোসাহেব আছেন বটে এখনো, সমানে মিছা তথ্যের যুদ্ধ চালায়ে যাচ্ছেন।
এদের মাঝে এক মোসাহেব যুক্তি দিতেছেন, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ৬০ কিলোমিটারের মাঝে যদি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থাকতে পারে, ইত্যাদি… এই মোসাহেবরা এমনই বড় বড় শব্দ চাবায়, আর ভাবে মানুষ খোঁজ নিয়ে দেখবে না সত্যিই তেমন কিছু আছে কিনা।
আরেক মোসাহেব বিজ্ঞ মত দিতেছেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ঠিকই আছে, সরকারের আসল ব্যর্থতা হলোÑ জনসংযোগে, মানে মানুষরে বুঝায়া উঠতে পারেনি এই প্রকল্পের ফলে সুন্দরবন কিভাবে সুন্দর থাকবে। বোঝেন, কতবড় বিশেষজ্ঞ ইনি, যদিও এই মোসাহেবকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়া যতগুলা প্রশ্ন তারই বন্ধুরা করছেন, একটারও কোনো যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি দেখলাম। মানে এনার দশা হলোÑ বটেই, আমি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়া এইমাত্র যে তথ্যগুলা দিলাম, সবগুলা ভুল, মানলাম। কিন্তু সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি এতে হবে না। সরকার যদি বিজ্ঞাপনে আরও যোগ্য মোসাহেবদের নিয়োগ করত, তাইলে আমজনতাও আমার মতোই বুইঝা সারতে পারত।
আরেক মোসাহেবের ‘দুসরা’ তো টেনিস বলের মতোই চাটুকারদের দেয়ালে টক্কর খাচ্ছে; রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যারা বলেন, সবাই বামাতি। বেশ, স্বয়ং জামায়াতি ভাবনাটা এ নিয়ে কি, জানবার জন্য কাল চট্টগ্রামে একটা পত্রিকার দোকানে চোখ বোলালাম ‘নয়া দিগন্তে’র মাসিক (নাকি সাপ্তাহিক?) পত্রিকাটার বর্তমান সংখ্যায়, প্রথম লেখাটাই সুন্দরবন নিয়ে। ও মা, আনিস আলমগীর ভাই যা যা যুক্তি দিয়েছেন, এক নজরে সবই পেলাম আশকার ইবনে শাইখের লেখাতেও। যথাÑ সুন্দরবন সুন্দরবনে চিরজীবন ছিল না, তার জন্য কেন তবে এত মায়াকান্না। অন্যদের হয়নি ক্ষতি, আমাদেরও হবে না। কয়লা বিদ্যুৎ অতি সস্তা, কয়লা পোড়াও বস্তা বস্তা। উন্নয়নের বিকল্প নেই, প্রাণ পুড়িয়ে উন্নয়ন চাই।
ভালোই হলো, মোসাহেব লীগ জামায়াতেরও অন্তত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশকে বুঝিয়ে ফেলতে পেরেছেন। তাদের বিজ্ঞাপন পুরোটা বিফলে গেছে, তা আর বলা যাবে না।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন /ফেসবুক থেকে