চার্জশিট বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে, র্যাব বলছে জেএমবি জড়িত তাভেল্লা সিজার হত্যা নিয়ে র্যাব ও পুলিশের মধ্যে মনোদ্বন্দ্ব
বিপ্লব বিশ্বাস: তাভেল্লা হত্যাকা- নিয়ে র্যাব ও পুুলিশ আবারো মনোদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার র্যাবের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে র্যাব ও পুলিশের মধ্যে এ মনোদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পুলিশ ইতোমধ্যে গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। অপরদিকে র্যাবের দাবি এ হত্যাকা-ের সঙ্গে নব্য জেএমবি জড়িত। ফলে এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যাকা-ের ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় নেতাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত ২৭ জুন আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে থাকা আসামিরা হলেনÑ ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এমএ কাইয়ুম, তার ভাই আব্দুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন শরিফ ও সোহেল ওরফে ভাঙারি সোহেল।
চার্জশিট দেওয়ার প্রায় চার মাসের মাথায় র্যাব বলছে, তাভেল্লা সিজারকে গুলি করে হত্যা করে নব্য জেএমবি। নব্য জেএমবির বাংলাদেশ প্রধান সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে শাইখ আবু ইব্রাহীম আল-হানিফের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। সারোয়ার জাহানের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নথি বিশ্লেষণ করে র্যাব কর্মকর্তাদের দাবি, তাভেল্লা ছাড়াও নব্য জেএমবি আরও অন্তত ২২টি হামলা চালিয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যা পেয়েছি তা প্রকাশ করেছি। এখন এটা তদন্তের বিষয়। পুলিশ কি করবে বা করবে না, তা তাদের নিজস্ব বিষয়। এনিয়ে আমাদের কোনো ভাষ্য নেই।’
ডিবির একটি সূত্র জানায়, তাভেল্লা সিজার হত্যাকা-ের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তামজিদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মতিনসহ তারা সবাই কারাগারে রয়েছে। অভিযোগপত্রে নাম আসা বাকি দুজন কাইয়ুম কমিশনার ও সোহেল এখনো পলাতক রয়েছেন। তাভেল্লা হত্যামামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশে-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করাই ছিল হামলাকারীদের ল্য। তাভেল্লাকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে তামজিদ। তাকে সহায়তা করে রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল। মিনহাজুল মোটরসাইকেল চালিয়েছিল। অভিযোগপত্রে এ হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আব্দুল মতিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মতিন ও তার ভাই কাইয়ুম কমিশনার এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা। হামলাকারীরা অস্ত্র ভাড়া নিয়েছিল ভাঙারি সোহেলের কাছ থেকে। আর মোটরসাইকেলের মালিক শাখাওয়াত। যদিও এ হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি এখনো উদ্ধার হয়নি।
অপরদিকে র্যাব বলছে, নব্য জেএমবির নেতৃত্বে তাভেল্লা ছাড়াও গত বছরের ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়ায় জাপানি নাগরিক হোসি কোনিও, ৫ অক্টোবর পাবনার ঈশ্বরদীতে ফাদার লুক সরকারকে হত্যা চেষ্টা, ২২ অক্টোবর রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশ চেকপোস্টের সময় এএসআই ইব্রাহীম মোল্লাকে হত্যা, ২৩ অক্টোবর তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা, ৪ নভেম্বর নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কে শিল্প পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হত্যা, ১৮ নভেম্বর দিনাজপুরে ইতালীয় ধর্মযাজক ড. পিয়েরো পারোলারি সামিওকে হত্যাচেষ্টা, ২৬ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে হামলা, ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাটির মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ চালানো হয়। এছাড়া চলতি বছর ২১ ফেব্রয়ারি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পুরোহিত যগেশ্বর দাসাধিকারীকে হত্যা, ২৫ মে গাইবান্ধায় দেবেশ চন্দ্র প্রামাণিক হত্যা, ৫ জুন নাটোরের বড়াইগ্রামে খ্রিস্টান পল্লীতে সুনীল গোমেজ হত্যা, ৭ জুন ঝিনাইদহের নলডাঙ্গায় পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে হত্যা, ১০ জুন পাবনার হেমায়েতপুরে খ্রিস্টান ধর্মযাজক নিত্যরঞ্জন পা-ে হত্যা, ১৫ জুন মাদারীপুরে কলেজ শিক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টা, ১ জুলাই ঝিনাইদহে রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে হত্যা, একই দিন গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা ও ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মসজিদে হামলা চালানো হয় আবু ইব্রাহীম আল-হানিফের নির্দেশনায়। বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম