আওয়ামী লীগের ৬৭ বছরের গন্তব্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
রাশিদ রিয়াজ : ১৯৫৩ সালে মাওলানা ভাসানী যখন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলটির সাধারণ সম্পাদক। সেই সময়ের রাজনীতির প্রধান গতিধারায় বঙ্গবন্ধু এভাবেই আত্মপ্রকাশ করেন যার পরবর্তী ধারাবাহিকতায় তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। দখলদার হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে জাতির জনকে পরিণত হন।
আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পুরনো রাজনৈতিক দল যেটি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে পথ চলতে শুরু করে সেই দলটির কুড়িতম কাউন্সিল শুরু হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেই ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে একটি ভগ্নাংশ যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসেবে রোজগার্ডেনে আত্মপ্রকাশের পর থেকে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে দলটি বর্তমান অবস্থানে এসেছে।
বলা চলে রোজগার্ডেনই আওয়ামী লীগের আঁতুড়ঘর ছিল। মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে এসে পুরান ঢাকার টিকাটুলির কে এম দাস লেনের রোজগার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন মাওলানা ভাসানী উদ্বোধনী ভাষণ দেন। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান। ওই সভায়ই স্বতন্ত্র একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়, যার নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। এই নতুন দলটিই তখন মুসলিম লীগের অস্তিত্বকে ছাপিয়ে প্রথম বিরোধী দল হয়ে ওঠে।
এরপর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর। সেই কাউন্সিলেই মাওলানা ভাসানী সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলটির হাল ধরেন। এ কাউন্সিলেই শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। কারণ ততদিনে কার্যত তিনিই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ও প্রভাবশালী নেতা হয়ে উঠেছেন।
১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের পঞ্চম কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের সভাপতি পদ লাভ করেন। যার আগে তিনি বেশকবার দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দিন আহমেদ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে রক্ষক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুর আগের বছর ১৯৭০ সালের ৪ জুন আওয়ামী লীগের শেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাউন্সিলরদের পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান। নির্বাচনে তখন আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের কাছে ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়।
এবং ১৯৭১ সালেই বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ও স্বাধীনতা অর্জন করে। যার নেতৃত্ব দেন অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দল আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বশেষ উপস্থিত ছিলেন। ওই কাউন্সিলে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন এবং সরকার থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে পৃথক করার প্রয়াস হিসেবেই তিনি তা করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ইতিহাসের এই বিয়োগান্তক অধ্যায় বাংলাদেশকে অনিশ্চয়তায় নিয়ে যায় ও গণতন্ত্রের পথ থেকে বিচ্যুত হয়।
এরপর ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের দুটি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দল তাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আব্দুল রাজ্জাক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা তখন থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন যা আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে। ১৯৮৭ সালে আওয়ামী লীগের ১৪
তম কাউন্সিলে শেখ হাসিনা পুনরায় সভানেত্রী ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল চলছিল।
এরপর আওয়ামী লীগের একাধিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা পাঁচ বছরের জন্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর আগে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকায় ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। আওয়ামী লীগের শাসনামলে শেখ হাসিনা দেশ ও দলের নেতৃত্ব দেন ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে বের হয়ে আসে এবং আগামী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। দীর্ঘ ৩৫ বছর দলের নেতৃত্ব দেয়ার মাঝে শেখ হাসিনা এখন তার দলে নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছেন। ডেইলি স্টার অবলম্বনে । সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু