৪০ বছর আগেই কি প্রাণের ইঙ্গিত মিলেছিল মঙ্গল গ্রহের মাটিতে?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রাণের ইঙ্গিত কি অনেক আগেই মিলেছিল ‘লাল গ্রহে’র মাটিতে? মঙ্গলের মাটিতে মিশে রয়েছে ুদ্রাতিুদ্র ব্যাকটেরিয়ার মতো বহু বহু কোটি অণুজীব, তা কি গত শতাব্দীর শেষের দিকেই টের পেয়ে গিয়েছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা?
এমনটাই দাবি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশের। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোবায়োলজি’র একেবারে হালের সংখ্যায় প্রকাশিত তাদের গবেষণাপত্রে ওই দাবি করেছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক গিলবার্ট লেভিন ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথের জীববিজ্ঞানী প্যাট্রিসিয়া অ্যান স্ট্র্যাট। তাদের বক্তব্য, ১৯৭৬ সালে পৃথিবী থেকে প্রথম যে দুটি রোভার মহাকাশযান ‘ভাইকিং-১’, ‘ভাইকিং-২’ মঙ্গল গ্রহে নেমে সেখান থেকে মাটি তুলে এনেছিল, তা পরীা করে তেমনই প্রমাণ মিলেছিল।
মঙ্গলে যে এখনো অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে, কীভাবে তার প্রমাণ পেয়েছিলেন জ্যোতির্জীববিজ্ঞানীরা?
ই-মেইলে পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে লস অ্যাঞ্জেলস থেকে আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গিলবার্ট লেভিন লিখেছেন, ‘ভাইকিং-১’ ও ‘ভাইকিং-২’, এ দুটি রোভার মহাকাশযান সে সময় মঙ্গলে নেমে সেখান থেকে ‘লাল গ্রহে’র মাটি তুলে এনেছিল। তারপর সেই মাটি ল্যাবরেটরিতে পরিশোধিত জলের মধ্যে রাখা হয়েছিল। আর সে জলের মধ্যে রাখা হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে নিউট্রিয়েন্ট। ওই পরীাটির নাম ছিল- ‘ল্যাব্ড রিলিজ (এলআর) এক্সপেরিমেন্ট’। ওই জলে রাখা নিউট্রিয়েন্টের সঙ্গে মঙ্গল গ্রহ থেকে তুলে আনা মাটি ভালো ভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেখার চেষ্টা হয়েছিল, মঙ্গলের মাটিতে এখনো সত্যি-সত্যিই অণুজীব রয়েছে কি না। অণুজীব থাকলে জলে মেশানো নিউট্রিয়েন্টগুলোকে জল থেকে শুষে নেওয়ার কথা ‘লাল গ্রহে’র মাটির। আর ঠিক সেটাই হয়েছিল। জলে মেশানো প্রচুর নিউট্রিয়েন্ট শুষে নিয়েছিল মঙ্গল থেকে তুলে আনা মাটি। ওই নিউট্রিয়েন্টগুলোর বিপাক হয়েছিল। দ্রবণের রং পরিবর্তন হয়েছিল, প্রত্যাশিতভাবেই। প্রত্যাশিত মাত্রাতেও। শুধু তাই নয়, ওই নিউট্রিয়েন্টগুলোর বিপাক বা মেটাবলিজমের পর সেই দ্রবণ বা সলিউশন থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থের অণু বেরিয়ে আসতেও দেখা গিয়েছিল। ঠিক যেভাবে পৃথিবীর মাটিতে অণুজীব থাকলে তা জলে মেশানো নিউট্রিয়েন্টগুলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে, ঠিক সেভাবেই। এটাই পরোে প্রমাণ করেছে, মঙ্গলের মাটিতে এখনো রয়েছে অণুজীবের অস্তিত্ব। প্রাণের অস্তিত্ব।’
তবে এটাও ঠিক, ওই সময় ‘ভাইকিং-১’ ও ‘ভাইকিং-২’-এর তুলে আনা মাটি দিয়ে আরও দুটি পরীা করা হয়েছিল আলাদা আলাদাভাবে। সেগুলো থেকে কিন্তু প্রাণের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ইঙ্গিত মেলেনি।
কেন সেই সময় মঙ্গলের মাটিতে প্রাণের ইঙ্গিত মেলার খবর ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করেনি নাসা?
পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি থেকে ই-মেইল জবাবে নাসার অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট ক্রিস ম্যাকে লিখেছেন, ‘প্রথমত, তিনটি পরীার মধ্যে বাকি দুটি পরীায় তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ বা ইঙ্গিত মেলেনি। দ্বিতীয়ত, মঙ্গলের মাটি বা বায়ুম-লে কোনো জৈব পদার্থের হদিস মেলেনি তখনো। তাই সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছিল, যদি কোনো জৈব পদার্থের অস্তিত্বই না থাকে মঙ্গলের মাটি বা বায়ুম-লে, তাহলে ‘লাল গ্রহে’র মাটিতে যদি থাকেও-বা অণুজীব এখনো, বেঁচে থাকার জন্য তারা বিপাক বা মেটাবলিজমটা করবে কীভাবে? সে েেত্র হয়তো কোনো নন-বায়োলজিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে ওই বিপাক বা মেটাবলিজম ঘটে থাকতে পারে।’
তার হালের গবেষণাপত্রে লেভিন লিখেছেন, ‘এবার সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে হয়তো ওই পরীার ফলাফল আবার খতিয়ে দেখা যেতে পারে। ‘লাল গ্রহে’ জল, মিথেনের অস্তিত্ব সাম্প্রতিক অতীতে প্রমাণিত হয়েছে। তাই প্রাণ যে সেখানে পৃথিবীর মতো কোনো পথেই সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বিশ্বাস আরও জোরালো হয়েছে আমাদের। তারই আলোকে এবার আমাদের ৪০ বছর আগেকার পরীার আবার খতিয়ে দেখা উচিত।’
গবেষকদের জোরালো বিশ্বাস, মঙ্গলের মাটিতে এখনো রয়েছে অণুজীবের মতো প্রাণের অস্তিত্ব।
ভেস্তে গেল ইউরোপের প্রথম মঙ্গল লাফ : সৌরজগতে ৫০ কোটি কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নির্ভুলভাবে নিজের প্যারাসুটও খুলে ফেলেছিল। মঙ্গলের কপথে বেশ কয়েকবার চড়কি পাকও দেয়। মঙ্গলের মাটি থেকে তখন তার অবস্থান মাত্র এক মিনিটের উচ্চতায়। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)-তে তখন সিগন্যাল দেওয়া স্ক্রিনের দিকে নিষ্পলক চোখে চেয়ে রয়েছে কতগুলো চোখ। আর কিছু ণের অপো মাত্র। ঠিক এক মিনিট পরই মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করবে স্কিয়াপারেল্লি মার্স ল্যান্ডার। ঠিক তখনই দুর্ঘটনা ঘটে গেল। লাল গ্রহের মাটি ছোঁয়ার প্রাক-মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে গেল স্কিয়াপারেল্লি মার্স ল্যান্ডার।
বৃহস্পতিবার এ দুর্ঘটনার পর, প্রেস বিবৃতিতে ইএসএ-র স্পেসক্র্যাফট অপারেশন ম্যানেজার অ্যান্ড্রি অ্যাকোমাজো জানান, মঙ্গলের মাটি থেকে ঠিক এক কিলোমিটার উপরেও সিগন্যাল ছিল। তখনো স্পেস ল্যান্ডার ঠিকঠাক কাজ করছিল। মাটি স্পর্শ করা থেকে মাত্র ১ মিনিট দূরে আচমকাই সিগন্যাল চলে যায়। তারপর থেকে আর ‘ট্র্যাক’ করা যাচ্ছে না স্পেস ল্যান্ডারটিকে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, সেটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সিগন্যাল না পাওয়ায় কীভাবে এ ঘটনা ঘটল আর ঠিক কোন জায়গাতে ঘটেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে এমনটা যে হতে পারে তা মঙ্গলের কপথে স্পেস ল্যান্ডারের পা দেওয়ার পরই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন ইএসএ-র বিজ্ঞানীরা। কারণ, মঙ্গলের আবহাওয়ায় যেমনটা কাজ করার কথা ছিল ল্যান্ডারটির, প্রথম থেকেই তাতে নাকি খানিকটা খামতি ছিল।
মঙ্গলে প্রাণের সন্ধানে দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে মহাকাশযান পাঠাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব সন্ধানে লাল মাটি খুঁড়ে নিয়ে আসা হচ্ছে পৃথিবীতে। স্কিয়াপারেল্লি মার্স ল্যান্ডারের উদ্দেশ্য অবশ্য একটু ভিন্ন ছিল। এক নতুন প্রযুক্তিকে মঙ্গলে প্রবেশাধিকার দেওয়ার চেষ্টা ছিল এ অভিযানে। স্কিয়াপারেল্লি মার্স ল্যান্ডার বয়ে নিয়ে গিয়েছিল ২ মিটার লম্বা ড্রিল মেশিন। প্রাণের সন্ধানে সেখানে মাটি খুঁড়তে সাহায্য করত এই ড্রিল। বিজ্ঞানীদের আশা ছিল, অভিযান সফল হলে আরও সহজ হতো এ গবেষণা। কিন্তু তার আগেই ধ্বংস হয়ে যায় যানটি। ইতালির মহাকাশচারী জিওভ্যান্নি স্কিয়াপারেল্লি নামে এ যানটির নাম রাখা হয়েছিল। গত রবিবারই তার উৎপেণ করা হয়েছিল।
স্কিয়াপারেল্লি মার্স ল্যান্ডারের পাঠানো সেই শেষ সিগন্যালটা ধরা পড়ে পুণেতে ভারতের মেগা টেলিস্কোপে। পুণের ৮০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ টেলিস্কোপটি হল দ্য জায়েন্ট মিটার ওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপ (জিএমআরটি)। ন্যাশনাল সেন্টার ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের ডিরেক্টর স্বর্ণ ঘোষ বলেন, ‘অনেক সময়ই কোনো কিছুর সঙ্গে সংঘর্ষে আগুন লেগে গেলে সিগন্যাল চলে যায়। এমনও হতে পারে ল্যান্ডার সুরতি ভাবেই মাটি স্পর্শ করেছিল। তারপর কোনো যান্ত্রিক কারণে সিগন্যাল হারিয়ে ফেলেছে। এ েেত্র কী ঘটেছে এখনই বলতে পারব না।’ সম্পাদনা: ইমরুল শাহেদ