আজ অগ্নিপরীক্ষার দিন কে হবেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক, ঘোষণা আসবে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার পর্দা উঠেছে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের। দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের অগ্নিপরীক্ষার দিন আজ। কেননা, রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর আজই ঘোষণা আসবে, কে হচ্ছেন দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক।
গতকাল সম্মেলনের প্রথমদিন পর্যন্তও আলোচনায় সরব ছিল- সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। অন্যান্যবার এ বিষয় সম্মেলনের আগেই নিশ্চিত থাকত, জানাজানি হয়ে যেত। এবারও সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের বিষয়টিও ছিল নেতাকর্মীদের কাছে নিশ্চিত খবর। কিন্তু হঠাৎ গত বুধবার থেকে ঘটনা নাটকীয় রূপ নেয়। আশরাফের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের নাম চলে আসে। এ নিয়ে গত তিন দিন আলোচনায় সরব থাকে দলটি।
গতকাল সম্মেলনে স্থলে দেখা গেছে, দলে দলে বিভক্ত হয়ে কাউন্সিলররা কাদের ও আশরাফের আলোচনা নিয়ে ছিলেন ব্যস্ত। জানা গেছে, আজ দলে সাংগঠনিক অধিবেশনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হবে।
প্রথমদিন যা হলো : আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পাশাপাশি সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এর পরপরই সম্মেলনের থিম সং পরিবেশন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দলের প্রাণ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, তারাই আওয়ামী লীগকে ধরে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে দারিদ্র্য উচ্ছেদে আতœনিয়োগ করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন স্থলে এসে পৌঁছান সকাল ১০টায় এবং পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সম্মেলন উদ্বোধনের পরে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। জেলা কমিটির নেতারা মঞ্চের সামনে তাদের জন্য নির্ধারিত আসনে আসন গ্রহণ করেন। পরে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ডায়াসে গিয়ে ২০তম জাতীয় সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কুরআন তেলাওয়াত করেন- ক্বারি সাইফুল ইসলাম, গীতা থেকে ড. অসীম সরকার, বাইবেল থেকে প্রলয় সমাদ্দার, ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন শীল প্রিয় ভিক্ষু।
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর শোক প্রস্তাব পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক অ্যাড. আবদুল মান্নান খান।
অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্মেলন উপলক্ষে আগত বিদেশি অতিথি, সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাদের অভিনন্দন জানান।
পরে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। এ সময়ে অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. দীপু মনি সম্মেলন উপলক্ষে আগত বিদেশি অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দেন। পরে বিদেশি অতিথিদের বক্তৃতা পর্ব শুরু হয়।
জাতীয় সম্মেলনে ছয় হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নিয়েছেন। বিকালে সম্মেলন স্থলে কেন্দ্রীয় ১৪ দল ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ রোববার কাউন্সিল অধিবেশন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে। এ সময় কমিটি নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন নির্বাচন কমিশন। তিন সদস্যের এ কমিশনের সদস্যারা হলেন- অ্যাড. ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রশিদুল আলম।
এদিকে, গতকালের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন- সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জমান নূর। প্রথমেই পরিবেশন করা হয় ‘এখন সময় বাংলাদেশের… এখন সময় আমাদের’। এ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। এরপর একে একে গাওয়া হয় ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’ আর ‘মোরা একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ…’। সর্বশেষ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন। সম্পাদনা: রিকু আমির