জ্বালানি দক্ষতার মাধ্যমে ২১ শতাংশ খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: জ্বালানির দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ১৬ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি ব্যবহার কমাতে পারে। এর মাধ্যমে কমবে ২১ শতাংশ জ্বালানি খরচ এবং ১৮ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনও। এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির (ডানিডা) অর্থায়নে ও নরডিক চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের (এনসিসিআই) পরিচালিত জ্বালানি দক্ষতা প্রকল্পের এক ফলাফলে এমনটি উল্লেখ করা হয়।
‘বাংলাদেশ: জ্বালানি দক্ষ শিল্পের সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে শনিবার বলা হয়, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সহযোগিতায় দ্য এনার্জি এফিশিয়েন্সি এনগেজমেন্ট (থ্রিই) সেক্রেটারিয়েট এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশি শিল্পের জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং ডানিডার অর্থায়নে পরিচালিত থ্রিই প্রকল্পের মূল তথ্যগুলো ডিসিসিআই সদস্যদের জানানো। এনসিসিআই প্রেসিডেন্ট এবং থ্রিই গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শামীম উল হক ব্যবসায় দীর্ঘস্থায়িত্ব ও মুনাফা নিশ্চিতের জন্য দক্ষ জ্বালানি ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, থ্রিই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এ প্রকল্পের পরামর্শ বাস্তবায়ন করায় আমি অনুপ্রাণিত। ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হোসেন খালেদ জ্বালানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনার দীর্ঘস্থায়িত্বকে আগামীর শিল্প সাফল্যের পথে চালিকা শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। থ্রিই প্রোগ্রামের সিনিয়র উপদেষ্টা স্টেফান স্কেয়ার এনভোল্ডসেন মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বলেন, থ্রিই প্রোগ্রামের জ্বালানি নিরীক্ষায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো জ্বালানি দক্ষতা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ১৬ শতাংশ জ্বালানি ব্যবহার, ২১ শতাংশ জ্বালানি খরচ এবং ১৮ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করতে পারে।
প্রোগ্রামটিতে অংশ নেওয়া ৩৬টি কারখানার তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, বার্ষিক গড়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার করে মোট ৫২ লাখ ডলারের জ্বালানি খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব। অধিকাংশ সুপারিশ অল্প খরচে ও সহজে বাস্তবায়নযোগ্য।
স্টেফান বলেন, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য জ্বালানি দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি খরচ কমিয়ে আরও জ্বালানির প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করতে পারে।
এর আগে স্টেফান স্কেয়ার এনভোল্ডসেন থ্রিই প্রকল্পের পরিচিতি, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং বিভিন্ন খাতে পরিচালিত জ্বালানি মূল্যায়নের সর্বশেষ ফলাফল তুলে ধরে জানান যে, অংশগ্রহণকারী শিল্প-কারখানাগুলো ইতোমধ্যে থ্রিই’র সুপারিশের ৬১ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে।
স্পিনিং মিলসগুলো যেসব জ্বালানি সমস্যার সম্মুখীন হয় তা নিয়ে আমান স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহরিন আমান একটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করেন। তিনি থ্রিই প্রকল্পে অংশগ্রহণের কারণ, জ্বালানি দক্ষতা অর্জন এবং এর জন্য সঠিক প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
রয়্যাল ড্যানিশ অ্যাম্বেসির বাণিজ্য উপদেষ্টা সরেন রোবেনহেগেন বলেন, সবুজ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ডেনমার্ককে একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। ডেনমার্ক কীভাবে সবুজ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থান অর্জন করেছে তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের আগামীর টেকসই প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে ডেনমার্ক আগ্রহী।
বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকায়েল হেমনিটি উইন্থার সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে শিল্প উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণের ব্যাপারে জোর দেন। ডেনমার্কের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ড্যানিশদের উদাহরণ প্রমাণ করে যে একইসঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, টেকসই ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির নীতি গ্রহণ ফলপ্রসূ হতে পারে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এনডিসি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (ডানিডা) অর্থায়নে দ্য এনার্জি এফিশিয়েন্সি এনগেজমেন্ট (থ্রিই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নরডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশের (এনসিসিআই)। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম