সৈয়দ আশরাফ দল ‘কাদের’ হাতে রেখে গেলেন?
অজয় দাশগুপ্ত
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে জনগণের চাইতে মিডিয়ার আগ্রহ ছিল প্রবল। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এখনো গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা কথার কথা। বাস্তবে তা অসম্ভব। রাজনীতির যা হাল তাতে চাইলেও দলে সমর্থক বা কর্মীদের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটানো যাবে না। সভাপতি বা দলীয় প্রধান চাইলেও অবসরে যেতে পারেন না। সেটা শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া উভয়ের বেলায় সত্য। পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতির ফসল এই রক্তের উত্তরাধিকার। এখন এটি দলের ঐক্য এবং দলকে জোড়া দিয়ে রাখার একমাত্র দাওয়াই। শেখ হাসিনা এর ঊর্ধ্বে চলে যাবার পরও পারছেন না। দল তা হতে দেবে না। ফলে আগ্রহ ছিল কেবল সম্পাদক পদটি নিয়ে। সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে কোনোদিন একটি শব্দও বিনিময় হয়নি। অন্যদিকে মন্ত্রী হবার আগে সামাজিক মিডিয়ায় সচল ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে লেখা নিয়ে কথা হতো। মন্ত্রীত্ব পাবার পরও দু-একবার কথা হয়েছে। সেটা তার বদান্যতা। কিন্তু আমার মন ও মননে সৈয়দ আশরাফের জায়গাটা তৈরি হয়েছে তার আচরণ ও ভূমিকায়। যে দেশে জোটের নামে সরকার ও বিরোধী দলে ঢুকে পড়া একদা বাম, জাসদ এমনকি একনেতার দলের লোকও বড় বড় কথা বলেন, নিশিদিন হুংকার ছাড়েন সেখানে আশরাফ ছিলেন পরিমিত। তাকে যেসব কারণে কেউ কেউ বাদ দিতে চেয়েছিলেন, সে কারণগুলো আসলে আধুনিক মানুষের লণ। লেস কোয়ালিটিও অশিেিতর রাজনীতি সেগুলো নিতে পারে না। তাদের আসলে চাই এরশাদ মার্কা লোকজন। যাদের নিয়ে তামাশা চলে। যারা কখনো ভাঁড়, কখনো গডফাদার আর সদা উত্তেজিত।
বিএনপি-জামায়াতের কঠিন আক্রোশ ও জ্বালাওপোড়ার সময়ও দেখেছি, তিনি ছিলেন শান্ত। ঘামছেন, চোখে মুখে অস্বস্তি তবু ভাষা ও কথায় লাগামহীন নন। এমন মানুষ বিএনপির কাউন্টার পার্ট মির্জা ফখরুলের যুৎসই জবাব। এখন সেটা থাকবে? ফখরুল সাহেবের পরিমিতির সঙ্গে চলতে না পারলে তিনিই এগিয়ে যাবেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের দুশমন তার ঘরে। তার ভিতরে। আশরাফের সময়কালে ইজম জেলা বা পদ নিয়ে কোনো ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়নি। তিনি তার নিজের মতো পদটিকেও সাধারণ ও সুন্দর করে রেখেছিলেন। কোনো দুর্নীতি, কোনো সুপারিশ বা কোনো নেগেটিভ বিষয়ে তার নাম আসেনি কোথাও। তাই বলব, তিনি তার উত্তরাধিকারীর পথ কঠিন করেই রেখে গেছেন।
মজার ব্যাপার, রমণীকূল ছিল তার দারুণ ভক্ত। আমার জানা রাজনীতি সচেতন প্রত্যেক মহিলা চেয়েছিলেন তিনি থেকে যান। একদা নারী ভোটে পিছিয়ে থাকা আওয়ামী লীগে এখন শেখ হাসিনাও সৈয়দ আশরাফের এগিয়ে থাকার জোয়ারে এবার টান পড়বে। দল কাকে কোন পদ দেবে সেটা তাদের বিষয়। নতুন নেতার দরকারও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। তাতে হয়তো ভালোই হবে আখেরে। তবে সৈয়দ আশরাফ কোয়ালিটি রাজনীতির প্রতিভূ। মানুষ যখন রাজনীতি ও দলগুলোর ওপর বীতশ্রদ্ধ তখন তার মতো মানুষের বিদায় কেমন যেন বুকে লাগে। আমরা যারা দল করি না, দলকানা নই আমরা দেখছি আর ভাবছিÑ সৈয়দ সাহেব, আপনি ‘কাদের’ হাতে রেখে গেলেন পিতার রক্তরঞ্জিত দলের আগামী দিনগুলো? সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতো আরও কেউ এ কথা বললেও বলতে পারত, পদ ধরে রাখার কোনো মানে হয় না। সময়ের ঘড়িতে আপনার বিদায় আপনাকে সময়জয়ী করুক। ভালো মানুষদের রাজনীতির শেষ প্রতিনিধি ছিলেন আপনি এমন যেন বলতে না হয় কোনোদিন।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক/সম্পাদনা: আশিক রহমান