ম্যাচ হেরেছি, অর্জনও কি কম?
মোস্তফা মামুন
ইংল্যান্ডের সঙ্গে চলমান টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের কাছাকাছি গিয়েও হেরে
গেছে। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বাংলাদেশ তো জয়ের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এটাও একটা অর্জন বাংলাদেশের জন্য।
দীর্ঘ ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমেছে ক্রিকেট দল। আমরা টেস্ট ক্রিকেটকে অতটা গুরুত্বভাবে নিই বলে মনে হয় না। আমাদের সামগ্রিক ক্রিকেট কাঠামো ওয়ানডে, টি-২০ উপযোগী। ফলে আমরা টেস্টের জন্য সেই অর্থে কাজ করি না। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি আমরা দেখি, ম্যাচটি মাত্র ২২ রানে হেরেছি আমরা, আর সেটাই আমার কাছে অর্জন মনে হয়। তবে এত কাছে গিয়েও ম্যাচ হারা খুবই দুঃখজনক। টেস্ট ক্রিকেটে এ রকম ঘটনা প্রচুর রয়েছে। দুই-তিনটি ম্যাচ ফিফটি-ফিফটি, জয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কোনোটাতেই আমরা জিততে পারিনি। আমরা যদি বেশি করে টেস্ট ম্যাচ খেলতাম, বড় দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত খেলতে পারতাম তাহলে খেলোয়াড়রা জানতেন, বুঝতে পারতেন ম্যাচের এরকম পরিস্থিতিতে কি করতে হয়, কিভাবে এমন ম্যাচে জয় ছিনিয়ে আনতে হয়। এটি যদি ওয়ানডে বা টি-২০ ম্যাচ হতো তাহলে হয়তো আমাদের ব্যাটসম্যানরা বড় শট খেলে প্রয়োজনীয় রানটি সংগ্রহ করে ফেলতেন। কিন্তু টেস্ট ম্যাচে ভালো করার জন্য যে সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা দরকার হয়, সেটা আমাদের খেলোয়াড়দের একটু কম আছে, এটাই হয়তো ম্যাচ হারার অন্যতম কারণ।
এই টেস্টে বাংলাদেশে দলের সবচেয়ে বড় ভুলটি বোধহয় সাকিবের সেই আউটটিই। এই টেস্টের তৃতীয় দিন সাকিব যেভাবে আউট হলেন, সেটা না হলে ওইদিন ভালো রানের লিড নেওয়ার সুযোগ ছিল। লিড থাকলে আমরা ভালো অবস্থানে থাকতাম। ইংল্যান্ডের চেয়ে আমরা এগিয়ে থাকতাম। তখন ম্যাচটা আমরা সহজে জয়ী হতে পারতাম। প্রথম ইনিংসে তামিম সেঞ্চুরি কাছাকাছি গিয়েও শতক পূর্ণ করতে পারেননি, মুশফিকও বড় ইনিংসের সম্ভাবনা জাগিয়ে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। মাহমুদুল্লাহ ৩৮ রান করে আউট হলেন। সাকিব যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন, ভেবেছিলাম রানটা বড় একটা জায়গায় নিয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু তিনি যেভাবে আউট হলেন তা আসলেই দুঃখজনক।
পেস বোলিংয়ে আমাদের অনেক দুর্বলতা ছিল। মাশরাফি, মুস্তাফিজ নেই। তাসকিনকে টেস্ট ম্যাচ খেলতে দিচ্ছি না। আল-আমিনকে অদ্ভুতভাবে টেস্ট ম্যাচে রাখা হয়নি। আর উইকেটটিও ছিল টেস্ট খেলার জন্য সবচেয়ে কঠিন। ইংল্যান্ডের বড় বড় ব্যাটসম্যানরাও ভালো করতে পারেননি, রান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অ্যালিস্টার কুক, জো রুটরাও রয়েছেন রান করতে না পারাদের দলে। ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানরা যখন রান করতে ব্যর্থ হন, সেখানে আমাদের খেলোয়াড়দের কী দোষ দেব?
পরিচিতি: লেখক ও সাংবাদিক
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান