মন্ত্রিসভা বৈঠক নদীর বালু পরিকল্পিতভাবে তোলার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
আনিসুর রহমান তপন : নদীর যেখানে-সেখানে নয়, স্থান নির্ধারণ করে পরিকল্পিত উপায়ে বালু তোলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনাকালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের এ নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে সমন্বিতভাবে এ বিষয়ে নজর রাখতে ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন নদী থেকে বালু না তুলে তা পরিকল্পিতভাবে তোলার ব্যবস্থা করুন। যেসব স্থান থেকে বালু উত্তোলন করলে জনসাধারণের ক্ষতি হবে নাÑ এমন স্থান নির্ধারণে প্রয়োজনে স্যাটেলাইটের চিত্র ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে নদীর বালু তোলার কথা বলেন। তিনি বলেন, নদীর যত্র-তত্র থেকে বালু তোলার ফলে সেতু ও ফসলের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও নদীর পাড় ভাঙ্গনসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর এ ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় কোন নদীর তলদেশ বা কোথায় বালু উত্তোলন করলে এ ধরনের ক্ষতির বিষয়টি এড়ানো যাবে সেটিও বিবেচনার দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিসভার আরেকজন সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা কে প্রবেশের পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান নিজের লেখা পদ্যের একটি সঙ্কলন প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ও তার বাবা কবি শওকত ওসমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, কবি শওকত ওসমান বঙ্গবন্ধুর এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাদের মধ্যে এতটাই আত্মিক সম্পর্ক ছিল যে, ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসলে শওকত ওসমান আর বাংলাদেশে থাকেননি। শওকত ওসমান ঘোষণা দেন এভাবে যে, জিয়ার রাজ্যে আর থাকবেন না। ফলে দেশান্তরী হন কবি। সে সময় কবি বাংলাদেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে তার বন্ধুদের আশ্রয়ে চলে যান। এরমধ্যে একজন ছিলেন মি. খতিব। শ্রীলঙ্কান এ ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে কবি মূলত তার এ বন্ধুর বাসাতে ওঠেন।
এদিকে একই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাও ভারতের দিল্লিতে থাকতেন। এ বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানকে বলেন, সে সময় শওকত ওসমান ও মি, খতিব প্রায় সময় আমাদের ওখানে যেতেন। রাজনীতি, সাহিত্য, কবিতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা হতো। এ সময় অনেক দিন আমি নিজ হাতে তাদের রান্নাবান্ন করে খাইয়েছি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে সকালেই মন্ত্রিসভা বৈঠকে যোগদেন আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মতাসীন দলে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানান কাদের। এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবাইকে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা। আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ধানমন্ডি পার্টি অফিসে সবাই বসে আছে। ওখানে গিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলব।
তবে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের গত দুই মেয়াদের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেননি। সাংবাদিকরা একের পর এক সৈয়দ আশরাফকে প্রশ্ন করলেও কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু বলেন, আজ কিছু বলব না, সময় হলে অন্য একদিন বলব।
তবে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সদ্য সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন আরেকজন মন্ত্রী। আলাপকালে তিনি জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে কাউন্সিল নিয়ে কোনো কথা হয়নি, প্রধানমন্ত্রীও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। মন্ত্রিসভার এ সদস্য আরও জানান, বৈঠক শুরুর বেশ কিছুণ আগে হাসিমুখে মন্ত্রিসভা কে প্রবেশ করেন নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফুরফুরে মেজাজে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আর মন্ত্রিসভার সদস্যরাও নতুন সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানান এ সময়। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম