হাসান আরিফ : শ্যালা নদীর উপর চাপ কমাতে নৌযান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে মংলা-ঘষিয়াখালি আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেল। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রার জন্যই ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই চ্যানেলটি খনন ও পলি অপসারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বৃহস্পতিবার ভিডিও কফারেন্সের মাধ্যমে এ চ্যানেলের উদ্বোধন করবেন।
অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর কর্তৃপ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকার ২৭০ থেকে ৩০০ ফুট চওড়া চ্যানেলটি ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর খনন শেষ হয়। এরপর নৌ চলাচলের জন্য পরীামূলকভাবে চ্যানেলটি খুলে দেওয়া হয়। গত এক বছরে মংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেল দিয়ে ৩৫ হাজার ভ্যাসেল চলাচল করেছে। এরমধ্যে ৬ থেকে ৮ ফুট গভীরতার ২৩ হাজার ৫০১টি এবং ১০ থেকে ১৪ ফুট গভীরতার ৯ হাজার ২৯৬টি পণ্যবাহী কার্গো চলাচল করেছে।
সূত্রটি আরো জানায়, মংলা-ঘষিয়াখালি আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেলের গভীরতা ১২ থেকে ১৫ ফুট আর চওড়ায় ২৭০ থেকে ৩০০ ফুট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চ্যানেলটি পরিপূর্ণভাবে চালু থাকলে মংলা বন্দর সক্রিয় থাকবে। আর এ অঞ্চলের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটবে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সুরাও মিলবে। এতে তেলবাহী ট্যাংকার ও সার বোঝাই জাহাজডুবির মতো নৌ দুর্ঘটনার হাত থেকে সুন্দরবনকে রা করা সহজ হবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান মুজাম্মেল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালি আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেল চালু হলে শ্যালা নদীর চ্যানেলের উপর চাপ কমবে, নৌ দুর্ঘটনাও কমে যাবে। তবে শ্যালা নদী দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ করা হবে কি না সে বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি জানান।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, মংলা-ঘষিয়াখালি আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেল দিয়ে এখন সর্বোচ্চ ১৫ ফুট গভীরতার পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে। কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য এ চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত ৮৩টি খালে আরও খনন কাজের দাবি জানানো হয়েছে।
মংলা বন্দরের সঙ্গে দেশের নৌ-যোগাযোগের দূরত্ব কমানোর জন্য ১৯৭৪ সালে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মংলা-ঘষিয়াখালি আন্তর্জাতিক নৌরুট চালু হয়। কিন্তু প্রভাশালীরা বাঁধ দিয়ে এ চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত ৮৩টি খালে চিংড়ি চাষ করে। এছাড়া পলি পড়ে খালের ২২ কিলোমিটার এলাকায় নৌ চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। ফলে ২০১০ সালের পর এই চ্যানেলটি নাব্য সংকটে পড়ে। এ কারণে ২০১১ সালে সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল শুরু হয়। সুন্দরবনকে সুরার জন্য ২০১৪ সালের ১ জুলাই ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেল থেকে এক কোটি ঘন মিটার পলি অপসারণের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যেই ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনা ঘটে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চ্যানেলটির দ্রুত খনন কাজ শুরু হয়। সম্পাদনা : আলাউদ্দিন