প্রথম সংবাদ সম্মেলন স্পটেই সমস্যার সমাধান ও সিদ্ধান্ত দেয়া হবে: ওবায়দুল কাদের
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: স্পটেই সমস্যার সমাধান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কোনো কাজ ফেলে রাখবেন না। যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধান করবেন। প্রয়োজনে স্পট থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোবাইলে কথা বলে সমাধান করে আসবেন।
দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী তৃণমূলপর্যায়ে গণসংযোগ করে আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় সংলগ্ন প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
দলের এত বড় দায়িত্ব পাওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আমার পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছি। রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছি। নেত্রী আমাকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিয়েছেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজের প্রধান কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে কাদের বলেন, এখন কাজ হলো, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের ল্েয ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়ন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করা ও আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ডায়নামিক লিডারশিপে তৃণমূলপর্যায় পর্যন্ত গণসংযোগ করে আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হবে। আমি মন্ত্রী নয়, একজন কর্মী। এ দায়িত্ব পাওয়ায় দলের মধ্যে থাকা সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সহজ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সেতুমন্ত্রী। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আগে আমি যখন রাস্তায় যেতাম, তখন দলের নেতাকর্মীরা আমাকে পেয়ে কোনো অভিযোগ করলে আমি সমাধান দিতে পারতাম না। এখন সুবিধা হবে, রাস্তায় যাব, তৃণমূলেও যাব। আমি অভিযোগের সমাধান ও সিদ্ধান্ত স্পটে দিতে পারবে। প্রয়োজনে স্পট থেকে মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সমাধান করব।
গত দুদিন ধরে সাধারণ সম্পাদক পদ কিশোরগঞ্জ থেকে নোয়াখালীতে সরে গেছে- এ আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, নেত্রী আমাকে গোটা বাংলাদেশের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ এক সুবিশাল দায়িত্ব। আমার বাড়ি একটি অঞ্চলে, কিন্তু আমার দল সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তার ওপরে দেশ। তাই এখানে কোনো আঞ্চলিকতা নেই। আমি যদি নিরপেভাবে দায়িত্ব পালন না করি, তাহলে নেত্রীর আস্থার অমর্যাদা হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা যেখানে আছেন সেখানে অনৈক্য-বিভেদ প্রশ্রয় পাবে না। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের নতুন সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাবই এবারের সম্মেলনের চমক এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ম্যাজিক পাওয়ার বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মন খারাপ কিনাÑ এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি মোটেও বিচলিত নন। গতকালও তার সঙ্গে কথা হয়েছে, আজকেও (গতকাল সোমবার) কেবিনেটে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তার মুখাবয়বে কোনো বিচলিত হওয়া বা হতাশার ছায়া দেখিনি। গত কয়েকটি কেবিনেটের চেয়েও তাকে আজ বেশি প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিউটি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হচ্ছে, গুণগত মান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল হতে শুরু করেছে। উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের আচরণের গুণগত মানও বাড়ছে। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের ফিউচার লিডার’ বলেও মন্তব্য করেন।
নতুন সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার সাত বছরের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আমার দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করবে।
সংবাদ সম্মেলনের আগে ধানমন্ডি কার্যালয়ের সামনে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন ওবায়দুল কাদের। সারাদেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সাধারণ সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনের পর ওবায়দুল কাদের কমিউনিটি সেন্টারের তৃতীয় তলায় ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তাদের নিয়ে একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ শেষে ওবায়দুল কাদের গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে গত রোববার বিকালে দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচিত হয়ে প্রথমেই তিনি দলীয় প্রধানের ধানমন্ডির কার্যালয়ে যান এবং সেখানে এশার নামাজ আদায় করেন। এরপর গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে সচিবালয়ে যান এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী ধানমন্ডির প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে আনুষ্ঠঅনিকভাবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর অনুভূতি প্রকাশ করেন। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু