বাংলাদেশের কষ্টের হার টেস্ট জিতল ইংল্যান্ড
এল আর বাদল: হার তো হারই, তারপরও সব হারে দুঃখবোধ হয় না, আড়ালে নিভৃতে কাঁদতেও হয় না। গতকাল যে পরাজয় হলো বাংলাদেশের, তাতে দেশের সবাই কষ্ট পেয়েছে, দুঃখ পেয়েছে, কেঁদেছেন গ্যালারির অনেক দর্শকও। জয়ের এত কাছে এসে হারÑ এ যেন মানার নয়। জয়টি হাতে ধরা দিলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এটি ঐতিহাসিক হয়ে থাকতো। ১৩ বছর আগে পাকিস্তানের মুলতানের দুঃখ মোছার অনুষঙ্গ হয়েও থাকতো। জয়ের সুযোগটা হাতছাড়া হওয়ায় প্রায় শুকিয়ে যাওয়া সেই তে উল্টো শুরু হলো নতুন রক্তরণ।
কল্পনাও করা যায় না। গতকাল মাত্র ৩ বলে টাইগারদের স্বপ্নের সমাধি। অথচ দিনটা কী প্রত্যয় নিয়েই না শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের মারণাস্ত্র স্টুয়ার্ট ব্রডের করা দিনের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ২ রান। সাব্বিরের শটে বেরুচ্ছিল সকালের রোদ্দুরের ঝলমলে আত্মবিশ্বাস। পরের বলেই ১ রান। এটাই রণকৌশল। এরপরই হিসাবের গরমিল। স্টোকসের বল নয়, যেন এক একটি বুলেট। তারপরও দ্বিতীয় বলে রান নিয়ে স্ট্রাইকিংয়ে তাইজুলকে এনে দিলেন সাব্বির। গত রোববারও জুটিতে তাইজুলই বেশি বল খেলেছেন। রানও ছিল বেশি। কিন্তু প্রতিটা ডেলিভারিতে তার অস্বস্তি ছিল স্পষ্ট। রান তোলা জরুরি। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি ছিল ঝুঁকি নেওয়ার হিসাবটা ঠিকমতো কষা। সারাটাদিন যেখানে পড়ে আছে।
তাইজুল প্রথম বলেই প্যাডে লাগিয়ে চার এনে দিলেন। সবকিছুই চলছে প।ে পরের তিনটা বল ঠেকিয়েও দিলেন। দিনের দুই ওভারেই ৮ রান তুলে ফেলল বাংলাদেশ। ব্রডের পরের ওভারের তৃতীয় বলে সাব্বির এক নিলেন। আবারও মাত্র তিনটি বলই তো ঠেকালেই হয় তাইজুলের। কিন্তু ওই ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশ নিয়ে নিল ১ রান। তাইজুল ফিরলেন স্ট্রাইকে। এখন মনে হচ্ছে, ১ রানের লোভ সামলানোই উচিত ছিল।
সেটি টের পেতে মাত্র এক বল লাগল। স্টোকসের নতুন ওভারের প্রথম বলে এলবিডব্লুর জোরালো আবেদন নাকচ হয়ে গেল। কিন্তু আম্পায়ার ধর্মসেনা ‘না’ বলেছেন বলেই হয়তো রিভিউয়ে আশা জাগল ইংল্যান্ডের। কিন্তু স্টোকসের নিজেরই ভঙ্গি বলে দিচ্ছিল, বলটা লেগ স্টাম্পের বাইরে যাবে বলে হয়তো শঙ্কা তারও। কিন্তু এই টেস্টে আরও একবারের মতো মার ভঙ্গি করে আগের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিয়ে আঙুল তুলে দিলেন ধর্মসেনা। ১৬ করে ফিরে গেলেন তাইজুল। বাকি রইলেন কেবল শফিউল। আর ননস্ট্রাইকিং প্রান্তে সাব্বির।
সাব্বিরকে শেষ পযন্ত নীরব দর্শক হয়েই থাকতে হলো। স্টোকসের ওই ওভারের তৃতীয় বলে আবারও জোরালো আবেদন। এবার কালপেণ নয়, ধর্মসেনা আঙুল তুলে দিলেন। সেই সঙ্গে বিষাদ আর হতাশায় রূপ নিল বাংলাদেশের আশার।
সংপ্তি স্কোর: ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৯৩ (মঈন ৬৮, বেয়ারস্টো ৫২, রুট ৪০, উকস ৩৬; মিরাজ ৬/৮০, সাকিব ২/৪৬, তাইজুল ২/৪৭)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৪৮ (তামিম ৭৮, মুশফিক ৪৮, মাহমুদউল্লাহ ৩৮, সাকিব ৩১; স্টোকস ৪/২৬, মঈন ৩/৭৫, রশীদ ২/৫৮)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৪০ (স্টোকস ৮৫, বেয়ারস্টো ৪৭, ওকস ১৯; সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ২/৪১)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২৬৩ (সাব্বির ৬৪, ইমরুল ৪৩, মুশফিক ৩৯; বাটি ৩/৬৫, স্টোকস ২/২০, মঈন ২/৬০) ফল: ইংল্যান্ড ২২ রানে জয়ী। সিরিজ: ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ইংল্যান্ড। ম্যাচ সেরা: বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)। সম্পাদনা: মাহমুদুল আলম