শ্যামক কান্তি ভক্তের লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু
নুরুল আজিজ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের এমপির উপস্থিতিতে প্রধান শিক শ্যামক কান্তি ভক্তের লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টা থেকে বন্দর কলাগাছিয়া ইউনিয়নের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ তদন্তকাজ শুরু হয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি তদন্তকাজ শুরু করেন। তদন্তকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম ও গোলাম নবী এবং নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তের আগে স্কুলের প্রধান শিক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কঠোর পুলিশ প্রহরায় স্কুলে আনা হয়।
গত ১৮ মে শিক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নয়, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোহাম্মদ ইকবাল কবির লিটনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রুলে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ ছাড়া আদেশে শিক লাঞ্ছনার ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৩ দিনের মধ্যে তার প্রতিবেদন জমা দিতে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর জেলা প্রশাসকের প থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরও সময় বাড়িয়ে পরবর্তীতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসি (তদন্ত)।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তেজিত জনতার দাবির প্রেেিত নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনাটি আকস্মিকভাবে ঘটেছে। শ্যামল কান্তি ভক্ত ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দুইজনই উদ্ভূত পরিস্থিতির শিকার। এতে প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট কারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় শ্যামল কান্তি ভক্ত কাউকে দোষী করছেন না। এমন কি আদালত বা পুলিশের কাছে অভিযোগ করবেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। ফলে এ ঘটনায় কারোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পরে পুলিশের দায়সারা এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাশের ডিভিশন বেঞ্চ নারায়ণগঞ্জের শিক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে এ ঘটনার তদন্ত করে ৩ নভেম্বর হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালত সেদিন বলেন, পুলিশ এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের তদন্তের প্রতিবেদন গ্রহণ করে নথিভুক্ত করার যে আদেশ দিয়েছে এতে আমরা মনে করি ঐ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারিক মনন (জুডিসিয়াল মাইন্ড) প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম