এগিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স আছে। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অবকাঠামোগত দিক। এ বিষয়ে আমি প্রথমে গুরুত্ব প্রদান করিবিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধা এবং গবেষণাগারের দিকে। তারপর রয়েছে শিক্ষকদের বসার জায়গা, শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত কাসরুম। এক্ষেত্রে সমস্যা এখনও রয়েছে। সব সমস্যাই যে অতিক্রম হয়েছে তা বলা যাবে না। কারণ মনে রাখতে হবেৃ, আমাদের বড় সমস্যা ‘জায়গা’র। মাত্র সাড়ে সাত একর জায়গার উপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের জায়গা খুবই সংকীর্ণ। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কক্ষ এবং ল্যাবরেটরি লাগবেই। আমরা প্রথমে উদ্যোগ গ্রহণ করি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ক্যাম্পাসে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করার। যাতে ক্যাম্পাসে সবাই ইন্টারনেট সুবিধা পায়। খুব দ্রুত ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে সবাই যেন বিশ্বমানের ডিজিটাল লাইব্রেরিতে প্রবেশের সুযোগটা পায়। সেই কাজটি আমরা ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন করেছি। এরই মধ্যে আমরা ই-লাইব্রেরি চালু করেছি। ই-বুক সিস্টেমে চলে যাচ্ছে পুরো গ্রন্থাগার। এখন সকলে বই বা গবেষণা পত্রিকা পড়ার জন্য খুব সহজেই ওইসব অনলাইনে প্রবেশ ও ডাউনলোড করতে পারেন। তবে লাইব্রেরির জন্য নতুন বই কেনা হয়েছে। লাইব্রেরিটি ই-লাইব্রেরিতে পরিণত হওয়ায় যুগের চাহিদাও পূরণ হয়েছে। এখন পৃথিবীর ২৬টি পাবলিশারের বই সরাসরি শিক্ষার্থীরা পড়তে পারছে। জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংকের
প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পুরো ক্যাম্পাস শতভাগ দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধার মধ্যে চলে আসবে। এতে করে পৃথিবীর যেকোনো লাইব্রেরি এবং প্রকাশনায় প্রবেশ করার মহাসড়কে আমরা যুক্ত হবো। এর ফলে আমাদের রিডিং ম্যাটেরিয়াল, তথ্য ও বইয়ের স্বল্পতা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কেটে যাবে।
৪. গবেষণাগারের উন্নয়নের কাজটি খুবই ব্যয়বহুল। গবেষণার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সেগুলোর মূল্য কোটি কোটি টাকা। তারপরও বিশ্বব্যাংকের ‘হেকেপ’ প্রকল্পের আওতায় ফার্মেসি, কম্পিউটার সায়েন্স, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম এবং মার্কেটিং বিভাগে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে এবং তার অনেকটাই প্রায় সম্পন্ন। আমাদের রসায়ন এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ল্যাবরেটরি এবং কম্পিউটার সুবিধার উন্নয়নের জন্য ‘হেকেপ’ প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই ল্যাবরেটরিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়াও চলছে। আমরা ল্যাবরেটরি উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। নিজস্ব অর্থায়নে ল্যাবরেটরির যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করা আমাদের সাধ্যের মধ্যে, সেসব যন্ত্রপাতি আমরা আস্তে আস্তে ক্রয় করছি। অর্থাৎ গবেষণা করার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শিক্ষকদের বসার স্থান এবং শিক্ষার্থীদের কাসরুমের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপের একশো কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। গত ৫ বছরে এর বাস্তবায়ন ছিল ৫ শতাংশেরও কম। কাজেই এই প্রকল্প বাতিল প্রকল্পের তালিকায় চলে যায়। পুনরায় এই প্রকল্পটিকে আমরা নতুনভাবে পুনঃজীবিত করে, সময় বাড়িয়ে বাস্তবায়ন করছি। এই প্রকল্পের প্রধান দুইটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। একটি হচ্ছে, একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ। এই কাজটি আমরা শুরু করেছি। বর্তমানে একটি ফোর সম্পন্ন হওয়ার পথে। ক্রমান্বয়ে একটির পর আরেকটি ফোর নির্মাণ হলে আমাদের কাসরুমের সংকট আর থাকবে না।
৫. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটি চরিত্র হচ্ছে, এটি শতভাগ অনাবাসিক। একজন শিক্ষার্থীরও থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী কারও কোনো থাকার ব্যবস্থা নেই। সেদিক থেকে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল মেয়েদের আবাসিক হল নির্মাণ। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এখানে আবাসিক সুবিধা
নেই। যে এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত অর্থাৎ পুরান ঢাকায় মেয়েদের নিরাপত্তাসহ স্বাস্থ্যসম্মত থাকার বাড়িঘরের অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেসের সংকট তো আছেই। যার কারণে এখানে ছাত্রীদের সংখ্যা কম। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আবাসনের জন্য আমরা প্রথমে মেয়েদের হল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ২০ তলা বিশিষ্ট আধুনিক বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামে একটি হল নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। যেখানে এক হাজার ছাত্রী অবস্থান করতে পারবে। পুরো উদ্যমে এই হলের নির্মাণ কাজ চলছে। এই হল নির্মাণ সম্পন্ন হলে কিছুটা হলেও ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা দূর হবে। সরকারের সহযোগিতায় এবং হল পুনরুদ্ধার কমিটির অকান্ত পরিশ্রমে বেদখল হওয়া কয়েকটি ছাত্রাবাস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেগুলোর বর্তমান স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ। জায়গা কম হওয়ায় সেখানে পূর্ণাঙ্গ হল হবে না। কাজেই এগুলোর বিকল্প ব্যবহারের পথ খুঁজছি।
৬. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নের জন্য
আমরা নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যেটা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই বছরের জানুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কয়েকটি মিটিং করে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এখন ‘একনেকে’ যাবে। আমরা আশা করছি, নতুন এই আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হলে আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের পথে বড় ধরনের মাইলফলক হবে। এই আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্পে দুই বড় কম্পোনেন্ট রয়েছে। একটি ২০ তলা দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ। বর্তমানে বিজ্ঞান ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ভবনটি ভেঙে সেখানে ২০ তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ছাত্রদের জন্য একটি হল নির্মাণ করা হবে। নামকরণের ব্যাপারে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
লেখক: উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান